মুশফিক ওয়াদুদ: আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের প্রভাব শুধু আফগান অথবা পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। পুরো এ অঞ্চলের প্রভাব ছিলো। আমি এটাও মনে করি বিএনপি-জামায়াতের বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান অবস্থানের পেছনে আফগানে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের প্রভাব আছে। এই যুদ্ধের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলো, অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের প্রধান মিত্রও ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইসলামের অথবা জামায়াতের মতো দলগুলোর সঙ্গে যে একটি সখ্যতা ছিলো তা আগের মতো আর থাকেনি। আমার এটাও মনে হয় যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছিলো সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের কারণে। আর এই নীতি পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি সুবিধা যে দেশটি পেয়েছে সেটি হলো ভারত। আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য ভারতের এই সময়টি ছিলো স্বর্ণযুগ। একদিকে আফগানিস্তানে সরকারের উপর পূর্ণ প্রভাব থেকেছে অন্যদিকে বেলুচ এবং পাকিস্তানি তালেবানদের দিয়ে পকিস্তানকে অস্থিতিশীল করে রাখা সম্ভব হয়েছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারতের জন্য এ যুদ্ধ ছিলো আশীর্বাদ। যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য সামন্ত দিয়ে বিলিয়ন ডলার খরচ করে পাহাড়া দিয়েছে আর ভারত ব্যবসা করেছে। আফগানিস্তানে ভারতের বড় ধরনের বিনিয়োগ আছে। বলা হয়ে থাকে আফগান যুদ্ধে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে ভারত আর চীন।
সুতরাং আফগান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার হলে, যুদ্ধের সমাপ্তি হলে এর প্রভাব পুরো অঞ্চলের রাজনীতির উপর পড়বে। বাংলাদেশও বাদ যাবে না। আর আঞ্চলিকভাবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ভারত। আফগান তালেবানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ। ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে ভারতের দূতাবাসে আক্রমণ হয়েছিলো। আর এবার ভারতে মুসলিমবিরোধী রায়ট নিয়ে আফগানিস্তানে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অথবা বিকল্প কোনো পরিকল্পনা নিয়ে ভারত এগোচ্ছে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আমার মনে হয় তালেবানরা যদি আফগানের ক্ষমতার অংশীদার হয় তবে আগামী কয়েক বছর আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় হবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :