ইসমাঈল আযহার: [২] আমানত অর্থ গচ্ছিত রাখা। আমানতের বিপরীত অর্থ খিয়ানত করা। কারও কোনও সম্পদ গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলে। হযরত মুহাম্মদ সা.-এর কাছে শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর লোকেরা তাদের মূল্যবান ধন-সম্পদ আমানত রাখত। আমানত হিফাজতের জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদিসে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
[৩] পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে –নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। –সূরা নিসা, আয়াত ৫৮
[৪] হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি তোমার নিকট আমানত রেখেছে, তার আমানত তাকে ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মাসাৎ করেছে, তুমি তার আমানত আত্মাসাৎ করো না। –আবু দাউদ
[৫] আমানত হিফাজতকারী ব্যক্তি হাশরের ময়দানে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত হবেন। হাশরের ময়দানে উপস্থিত অন্যান্য লোক দুনিয়ায় আমানত হিফাজতকারী ব্যক্তিদের দিকে তাকাতে থাকবে। একে অপরের নিকট আমানতকারী ব্যক্তিকে নিয়ে বলাবলি করতে থাকবেল তারা কে, তারা তো আমাদের সঙ্গেই ছিল। আজ তারা আমাদের চেয়ে ভিন্ন স্থানে ও ভিন্ন মর্যাদার অধিকারী।
[৬] হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সা. বলেছেন, একজন সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী আখেরাতে নবীসিদ্দিক এবং শহীদগণের সঙ্গে থাকবে। –তিরমিযি আমানত খিয়ানত করা মুনাফিকের আলামত।
[৭] মহানবী সা. বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি ১. যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে। ২. ওয়াদা করলে বরখেলাপ করে। ৩. আমানত রাখলে এতে খিয়ানত করে। (মিশকাত শরীফ)
[৮] আল্লাহ্ ও তার রাসূল সা. মুনাফিকদের অপছন্দ করেন। কারণ, আমানত খিয়ানত করার মাধ্যমে ঈমান চলে যায়। এ জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদিসে আমানত খিয়ানত না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে– হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের খিয়ানত করো না। আর খিয়ানত করো না নিজেদের আমানতসমূহের। –সূরা আনফাল
[৯] হযরত আনাস রা থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার ঈমানও নেই। আর যে ওয়াদা পালন করে না তার মধ্যে দ্বীন নেই। –আহমদ আমানতের হিফাজত করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পরকালে সাফল্য লাভ করতে হলে আল্লাহ্তায়ালার দেওয়া আমানতের হিফাজত করতে হবে। যেমন যৌবনের হিফাজত, চোখের হিফাজত, কানের হিফাজত, জবানের হিফাজত, হাত ও পায়ের হিফাজত ইত্যাদি।
[১০] আল্লাহ্তায়ালা সম্পদ দিয়েছেন, দ্বীনের পথে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য। তা না করে কেউ যদি অশ্লীল মন্দ পথে সম্পদ ব্যয় করে, তাহলে সে আল্লাহর দেওয়া আমানতের খিয়ানত করল। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে– নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতির হিফাজত করে। যারা নামাযের ব্যাপারে যত্নবান হয়। তারাই এমন ধরনের উত্তরাধিকারী যারা নিজেদের উত্তরাধিকার হিসেবে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে, এরা অনন্তকাল সেখানে থাকবে। –সূরা মুমিনুন
আপনার মতামত লিখুন :