ডা. ইকবাল আনোয়ার: আমাদের দেশে তিনজন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্তকরণের কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতোদিন আমরা স্ক্রিনিং করছিলাম। এখন রণাঙ্গনে প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হলো। আল্লাহ আমাদের জয়ী করুণ। এ মুহূর্তেই প্রচেষ্টার প্রধান লক্ষ্য হবে যারা আক্রান্ত তাদের পৃথক করে ফেলা। সর্বসাধারণের জন্য বলছি, এই পৃথক করা মানে ছুঁড়ে দেয়া বা ঘৃণা করা বা বিনা চিকিৎসায় রাখা নয়, বরং তাদের মর্যাদা/মমতা দিয়ে চিকিৎসা করা। তবে তা করতে হবে সাধারণ জনগণ থেকে আলাদা করে।
চৌদ্দ দিন/রোগ ছড়াতে পারে যতোদিন ততোদিন ও আরও কদিন বাড়িয়ে (কেননা বিশেষ ক্ষেত্রে এ বাড়তি সময়টাতেও ছড়াতে পারে) এই পৃথকীকরণ যতো সুক্ষ ও বৈজ্ঞানিকভাবে করা যাবে, ততোই সহজে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ অর্জিত হবে। বেঁচে যাবে কোটি কোটি টাকা, কোটি কোটি মানুষ। ভয়ের কিছু নেই, অধিকাংশ সময়ে (এ রোগে মৃত্যু সম্ভাবনা দুই থেকে তিন পার্সেন্ট, যা সার্স বা মার্স থেকে অনেক অনেক কম। তবে এর সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি বলেই ভাবনাটা বেশি) তারা ভালো হয়েই বাড়ি যাবেন ইনশাল্লাহ।
কথা হলো এখন শনাক্তকৃত রোগীকে কোথায়, কীভাবে পৃথক রাখবো। জনস্বাস্থ্যের একজন ছাত্র হিসাবে বলবো, তা হতে হবে আলাদা স্থান, যেটা জনবিরল এবং তাদের জন্য তৈরি আলাদা হাসপাতাল, যে হাসপাতালের কক্ষ হবে নেগেটিভ প্রেসার সম্পন্ন, অর্থাৎ কক্ষ থেকে বাতাস বাইরে যাবে না, বাইরে থেকে ভিতরে কেবল প্রবেশ করবে (সাধারণ কথায়) এমন কক্ষ অলা। প্রথম দিকে যতো দ্রুত ও দক্ষতায় তা করা যাবে ততোই তা হবে সাশ্রয়ী এবং সাফল্য নিশ্চিত হবে সহজে। এ মুহূর্তে তিনজনের কোয়ারেন্টাইন দক্ষতায় ঘাটতি হলে শনৈ শনৈ ভাবে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। এ যেন এখন লাগবে মাত্র তিন জোড়া জুতা, অসফল/অসতর্ক হলে তখন চামড়া দিয়ে পুরো জমিন মোড়াতে হবে।
যদি আমরা জনবহুল স্থানে কোনো হাসপাতালে তাদের রাখি, ও সে রকম কক্ষ না থাকে, তবে তা হবে গোড়ায় গলদের মতো। কারণ ভাইরাস ছড়িয়ে গেলে তাদের রাখার জন্য জনবিরল স্থানে অতো বিশেষ হাসপাতাল আমরা তখন পাবোনা। ঘণ বসতি ও স্বাস্থ্য বিধি না মানার প্রবণতা ও কম সম্পদ সম্পন্ন আমাদের দেশ তখন হবে পৃথিবীর সকল স্থানের চেয়ে সবচে মারাক্তব আক্রান্ত স্থান। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুণ। যদি তাদের জনবহুল স্থানে হাসপাতালে রাখি, যেখানে রয়েছে কোনো না কোনো রোগে ভোগা/বয়স্ক/শিশু/রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারনে ভালনারেবল/আক্রান্ত হবার সম্ভবনা- ঘন মানুষ, যাদের মধ্যে করোনা ছড়ালে মুত্যু ঝুঁকি অনেকগুন তো বটেই এবং তা ছড়িয়ে পড়বে তড়িৎ উপায়ে, তখন তা হবে আগুন যে যাবে দ্রুত ছড়ায়, তেমন। আশা করি বিজ্ঞ কতৃপক্ষ যারা কেন্দ্রে এ মুহূর্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দক্ষতার সঙ্গে তারা এ বিষয়টি এ রকম ভাবে চিন্তা করেই মোকাবেলা করছেন।
এবং আশা করি, শোনা যাচ্ছে যা, যে তাদের জনবহুল স্থানে হাসপাতালে রেখে কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে তা সঠিক শোনা নয়। কোনো রকম সমালোচনা নয় মোটেও, কেবল জনস্বার্থে , জনস্বাস্থের একজন নগন্য ছাত্র হিসাবে আমার ধারণা এখানে প্রকাশ করলাম, এতে কোনো সারবার্তা থাকলে তা গ্রহণ করা যেন যায়। ভাবতে দোষ কী? নতুবা যা করা হচ্ছে তা তো ঠিকই আছে। আর জন সচেতনতামূলক পদক্ষেপে যা প্রচার হচ্ছে কেন্দ্র থেকে তা তো বিকল্পহীনভাবে পালন করতেই হবে। কোনো রকম আতঙ্ক নয়, কেবল নিয়ম বিধি মেনে চলার মধ্য দিয়েই এর মোকাবেলা সম্ভব এবং এ বিধিগুলো জনজীবনে রপ্ত করে আমরা এ ধরনের সকল রোগ থেকে ভবিষ্যতেও রক্ষা পাবো। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :