আকতার বানু আলপনা: যে পুরুষ আপনাকে সামান্য চেনে বা একেবারেই চেনে না, সেও আপনাকে দৈহিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন করে। যেমন : রাস্তায়, বাজারে, বাসে-ট্রেনে বা ভিড়ে সে বা তারা আপনার গায়ে হাত দেয় বা দেওয়ার চেষ্টা করে। আপনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে নানা অশ্রাব্য অশ্লীল কথা বলে। চোখ টিপে বিশ্রী ইঙ্গিত করে। অশ্লীল, লোলুপ মুখভঙ্গি করে। বিশ্রী চোখে আপনার শরীরের দিকে তাকায়, যেন আপনাকে জ্যান্ত গিলে খাবে। আপনাকে অশ্লীল ছবি, ভিডিও পাঠায়। অসময়ে কল দিয়ে বিরক্ত করে। আজেবাজে কথা বলে বা লেখে। আর যারা আপনাকে চেনে বা যারা আপনার আপনজন তারা?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন সার্ভে ২০১৫’ শীর্ষক জরিপমতে, বর্তমানে বিবাহিত নারীদের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। ২০১১ সালে প্রথম জরিপে এ সংখ্যা ছিলো ৮৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ চার বছরে নির্যাতনের হার কমেছে ৭ শতাংশ। তবে বিবাহিত নারীরা আগের মতোই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন স্বামীর হাতে। কিন্তু অধিকাংশ নারীরাই নির্যাতকের বিরুদ্ধে কাউকে কোনো অভিযোগ করেন না (৭২ দশমিক ৭ শতাংশ)। কেন করেন না, এ প্রশ্নের উত্তরে শতকরা ৩৯ জনের বেশি নারী বলেছেন, পারিবারিক সম্মানের কথা চিন্তা করে, আরও নির্যাতনের ভয়ে, স্ত্রীকে স্বামীর মারার অধিকার আছে ভেবে অথবা লজ্জায় তারা বিষয়গুলো কাউকে জানানোর প্রয়োজনই মনে করেননি। কারণ নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে তারা ‘পরিবারিক বিষয়’ বলে মনে করেন। আমি তখন কলেজে পড়ি। একবার ট্রেনে জয়পুরহাট যাচ্ছিলাম। আব্দুলপুর স্টেশনে প্রায় আধাঘণ্টামতো ট্রেন থামে। ট্রেন থামতেই এক পাগলীকে ট্রেনে উঠতে দেখলাম। পাতলা একটা সূতি জামা পরা। ট্রেন ছাড়ার সামান্য আগে যখন পাগলিটা ট্রেন থেকে নেমে গেলো, তখন দেখলাম, পাগলিটার জামা বুকের কাছে ছেঁড়া।
কতো রকমভাবে যে নারীদের নির্যাতন করা যায়, তার কোনো ঠিক নেই। শুধু পুরুষ নয়, নারী নির্যাতিত হয় নারীদের দ্বারাও। নারী তার চারপাশের মানুষদের এই নানাবিধ নির্যাতন সহ্য করেও টিকে আছে, এগিয়ে যাচ্ছে। এ রকম কাজ কেবল নারীই পারে। তাই নারী তুমি নারী হও। আপন আলোয় উজ্জ্বল, ভাস্বর। নারী দিবসে সব নারী ও নারীবান্ধব পুরুষকে অনেক ভালোবাসা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :