সওগাত আলী সাগর: টরন্টোয় আমরা যখন বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন শুরু করি, তখন অনেকেই প্রশ্ন করতেন টাকাটা পাচার হয় কীভাবে? কেউ কেউ আরও একটু এগিয়ে গিয়ে বলতেন, কানাডা কি সব চোর ডাকাতদের আশ্রয় দেয়? ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) সম্প্রতি যে প্রতিবেদনটা প্রকাশ করেছে, তাতে সম্ভবত এই প্রশ্নের খানিকটা উত্তর পাওয়া যেতে পারে।
সংস্থাটির তথ্যানুসারে, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আমদানি-রফতানিতে জালিয়াতির মাধ্যমেএই পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মানে হচ্ছে- এই অংকটা কেবল একটি খাতে পাচারের চিত্র। ব্যাংকের টাকা লুটপাট এবং বিদেশে পাচার করে দেয়ার ঘটনা তো পুরনো। ব্যাংকগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে যেভাবে মোট অংকের ঋণ অনুমোদন করে- তাকে সফিস্টিকেটেড ব্যাংক ডাকাতির সাথেই তুলনা করে চলে। সেই টাকা অধিকাংশ সময়েই বিদেশে চলে গিয়েছে। জিএফআইর রিপোর্টে যে জালিয়াতির কথা বলা হচ্ছে, সেটিও নতুন কিছু নয়। ১৬/১৭ বছর আগে যখন মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি তখনো এই জালিয়াতির কথা শোনা যেতো। সময়ের পরিক্রমায় সেই জালিয়াতির প্রবণতা বেড়েছে বই কমেনি। এই জালিয়াতি এবং পাচারের ঘটনাটা ঘটেছে দেশের আমদানি এবং রপ্তানি ক্ষেত্রে। আমদানিকারকেরা ওভার ইনভয়েসিং করে অর্থাৎ পণ্যের মূল্য যে দরে কিনেছেন তার চেয়ে বেশি দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। আবার রপ্তানিকারকরা আন্ডার ইনভয়েসিং করে অর্থ্যাৎ বিক্রয় মূল্যের চেয়ে কম দেখিয়ে বাড়তি টাকাটা বিদেশে রেখে এসেছেন। আমদানি রপ্তানির এই জালিয়াতিটা দেখার কথা দেশের রাজস্ব বোর্ডের । তারা আসলে কি করেছে সে ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নাই।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে, দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে- এইসব কথা আমরা খুবই শুনি। কিন্তু বিপুল পরিমান টাকা যে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে তেমন কথা বলতে কাউকে দেখা যায় না। রাজনীতিকরা তো নাই- সুশীল সমাজ কিংবা মিডিয়া কেউই এই ইস্যূতে কথা বলা বা জনমত তৈরির কোনো উদ্যোগ নেয় না।
কেবল আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা গত ৯ বছরে যে ৬৪ হাজার কোটি দেশ থেকে বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন- তা দিয়ে কয়টা পদ্মা সেতুর খরচ যোগানো যেতো? দেশে কয়টা উন্নত মানের হাসপাতাল তৈরি করা যেতো? আর কী কী করা যেতো? আচ্ছা, এই যে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে রাষ্ট্রের কি কোনো উদ্বেগ আছে? আমার তো মনে হয় মুদ্রা পাচারের বিরুদ্ধে টরন্টোয় আমরা যে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছি, খোদ বাংলাদেশেরই এখন এ নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠা জরুরি হয়ে উঠেছে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :