মুসবা তিন্নি : সাধারণত সাদা রঙের ডিমের সঙ্গে আমরা পরিচিত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাণীকূলে এমন কিছু ডিম রয়েছে যার অস্তিত্ব অবাক করে! এসব ডিমগুলো দেখতে যেমন বিষ্ময়কর তেমনি প্রাণীকূলের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর প্রক্রিয়াও বেশ রহস্যময়। জেনে নেয়া যাক অদ্ভুত কিছু ডিম সম্পর্কে-
টিনামু
এই পাখিটি হয়তো প্রথমবার দেখছেন! পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই পাখিটি সম্পর্কে জানেনা! কারণ এই পাখিদের জীবনযাপন অনেক গোপনীয় হয়ে থাকে। পুরো পৃথিবীতে বর্তমানে এই প্রজাতির ৪৭ টি পাখি বেঁচে আছে। এই পাখির ডিম পৃথিবীর সব পাখিদের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকে। এদের ডিম পরিষ্কার ও অনেক রঙের হয়ে থাকে। স্ত্রী পাখি ডিম পেড়ে চলে যায়। তারপর পুরুষ পাখি দেখাশুনা করে ডিমগুলো। এই পাখির ডিম বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। আর এই ডিমের আকারের মুরগির ডিমের মতো হয়ে থাকে। ডিম রঙিন হওয়ায় দেখতে খেলনার মতো মনে হয়।
জিমনোফিওনা
এই জীবটি দেখতে একেবারে কীট পতঙ্গের মতো। এগুলো সাধারণত ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে এদের কিছু প্রজাতি অনেক বড় আকৃতির হয়ে থাকে। এটিকে প্রথমবার দেখলে মনে হবে হয়ত কোনো সাপ। এদের ডিমগুলো দেখতে কাঁচের মতো পরিষ্কার। এই ডিমের ভেতরে বাচ্চা নড়াচড়া করে তা দেখা যায়। এদের জীবন ব্যবস্থা অনেক অদ্ভুত। বিজ্ঞানীরা এখনো এদের সম্পর্কে তেমন জানতে পারেনি।
হর্ণ শার্ক
আমরা হাঙ্গর সম্পর্কে অনেকেই জানি। তবে জানেন কি হাঙ্গর ডিম দেয়? তবে হাঙ্গরের ৭০ শতাংশ প্রজাতি বাচ্চা দেয়। বাকী ৩০ শতাংশ ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোঁটায়। হাঙ্গরের ডিম দেখতে আজব ও অদ্ভুত। এই ডিমগুলো দেখতে শামুকের মতো। বাইরে থেকে অনেক শক্ত। এর কারণ হলো যাতে বাইরে থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করতে পারে। হাঙ্গর ডিম দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুখে করে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যায়। যখন ডিম দেয় তখন ডিম অনেক নরম থাকে। তবে কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে ডিমটি শক্ত হতে শুরু করে। ডিমটি দেখে কেউ চিন্তাও করতে পারবে না এটি একটি ডিম। কারণ এটি দেখতে শামুকের মতো।
ইয়োলোহেড জফিশ
পৃথিবীতে যত মাছ রয়েছে তাদের বাচ্চাদের হেফাজত স্ত্রী মাছই করে থাকে। তবে জফিশের ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন। এই মাছ ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই মাছের ডিম পুরুষ মাছ তার মুখের ভেতর রাখে। স্ত্রী মাছ ডিম দিয়ে গায়েব হয়ে যায়। তারপর পুরুষ মাছ তার মুখের ভেতর নিয়ে নেয়। তবে এই ডিম গুলো খায় না, মুখের ভেতর রেখে দেয়। যতক্ষণ না এই ডিম থেকে বাচ্চা বের হয় ততক্ষণ বাবা মাছের মুখেই ডিম থাকে। শুধু মাঝেমধ্যে ডিমগুলোকে হালকা বাইরের দিকে বের করে যাতে মাছগুলো মুখের ভেতর অক্সিজেন নিতে পারেন। এই মাছের ডিম ছোট ছোট জেলির মতো হয়ে থাকে।
অক্টোপাস
স্ত্রী অক্টোপাস জীবনে একবার ডিম দেয়। ডিম দেয়ার জন্য স্ত্রী অক্টোপাস সামুদ্রিক শৈবাল কিংবা সামুদ্রিক কোনো পাথরের নিচে চলে যায়। তারপর সেখানে একটি ঘর তৈরি করে এবং একসঙ্গে ৮০ হাজার ডিম দেয়। এই ডিম গুলো দেখতে আঙ্গুরের মতো মনে হয়। স্ত্রী অক্টোপাস সবসময় এই ডিম গুলোর কাছে থাকে। বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী অক্টোপাস কোনো কিছু না খেয়ে এই ডিম গুলো পাহারা দেয়। তারপর যখন ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে তখন স্ত্রী অক্টোপাস না খেয়ে মারা যান। এই পদ্ধতিটি সব স্ত্রী অক্টোপাসের সঙ্গে হয়ে থাকে। সব স্ত্রী অক্টোপাস বাচ্চা জন্ম দেয়ার পড়ে মারা যায়।
মৌমাছি
পৃথিবীর সব দেশেই রয়েছে মৌমাছি। তবে জানেন কীভাবে মৌমাছি জন্ম নেয়? যে কোনো মৌমাছির চাকে যত মৌমাছি থাকে সব মৌমাছি একটি মাত্র কুইন মৌমাছি থেকে জন্ম নেয়। কুইন মৌমাছি জীবনে একবার মিলন করে। মৌমাছি সাদা রঙের ডিম দেয়। প্রত্যেকটি মৌমাছি একবার করে ডিম দেয়। তিনদিন পড়ে এই ডিমের ফুটতে শুরু করে। মৌমাছির বাচ্চা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়। মাত্র ২০ দিনের মধ্যে বাচ্চা উড়তে শুরু করে।
জায়ান্ট ওয়াটার বাগ
এই ওয়াটার বাগ পৃথিবীর সব জায়গায় দেয় যায়। এদের আকার ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই ছোট ওয়াটার বাগ মানুষকে সাঁতার কাঁটার সময় কামড় দেয়। এদের কামড়ে অনেক ব্যথা হয়ে থাকে। এই ওয়াটার বাগ ডিম দেয়। এদের ডিম খুব সহজেই তাদের পিঠের উপর দেখা যায়। মজার ব্যাপার হলো স্ত্রী বাগ পুরুষ বাগের পিঠের উপর ডিম দেয়। এই ডিম পুরুষ বাগ দেখাশুনা করে। পুরুষ বাগের শরীরে এই ডিম ১০ থেকে ১৫ দিন থাকে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হলে পেট পরিষ্কার হয়ে যায়। সূত্র : প্রিয় ডটকম, বিশ্ব ও বিষ্ময়,ডেইলি বাংলাদেশ,
আপনার মতামত লিখুন :