বাংলানিউজ : [২] টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ২৮ জন মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে তাদের নামে তোলা হচ্ছে বয়স্ক ভাতা। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট বয়সসীমার অনেক কম বয়সীদের দেওয়া হচ্ছে এই সুবিধা। শুধু তা-ই নয়, ভাতা সুবিধাটি পাচ্ছেন একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী দুজন একসঙ্গেও। যার সবগুলোই নীতিমালার বাইরে।
মৃত ব্যক্তিকে কাগজে-কলমে জীবিত দেখিয়ে, তুলনামূলক কম বয়সীদের অর্ন্তভুক্ত করে এবং একসঙ্গে এক পরিবারের স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ে বয়স্ক ভাতার তালিকা প্রণয়ন করেছে ঘাটাইল ইউনিয়ন। এছাড়া ভাতা যারা গ্রহণ করছেন, তাদের কাছ থেকে ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
[৩]অভিযোগ আছে, যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দর আলী এই তালিকা করেছেন। ইউনিয়ন কমিটির কাউকে বিষয়টি অবগতও করেননি তিনি। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে একইসঙ্গে বঞ্চিত হচ্ছেন ভাতা পাওয়ার প্রকৃত যোগ্যরা।
[৪]এছাড়া ২নং ঘাটাইল ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে অনুসন্ধানে এমন তথ্যও মিলেছে ইউপি চেয়ারম্যান হায়দর আলীর বিরুদ্ধে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ঘাটাইলের বয়স্ক ভাতার যে তালিকা নিশ্চিত করেছেন, তাতে দেখা গেছে ইউনিয়নে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ২১১ নম্বরে রয়েছে বিরাহিমপুর গ্রামের আজাহেরের নাম। যিনি মারা গেছেন নয় বছর আগে।
[৫]একই গ্রামের নার্গিস বেওয়ার নাম রয়েছে তালিকার ১৯ নম্বরে। যিনি মারা গেছেন প্রায় দুই বছর আগে। যদিও তারা আমাদের মাঝে আর নেই, এরপরও তাদের নামে নিয়মিত উঠানো হচ্ছে ভাতার টাকা।
কে নিচ্ছেন এই টাকা! হিসেব মেলাতে পারছে না মৃতদের স্বজনরা। মৃত আজাহেরের ছেলে হাফেজ মনির হোসেন বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর ভাতার কার্ড কে নিয়ে গেছে, কোথায় আছে, আমরা কিছুই জানি না। তবে জানতে ইচ্ছে করছে বাবার নামে আসা এ টাকা ব্যাংক থেকে তোলে কে?
[৬]নার্গিস বেওয়ার বোন খোদেজা বেগম বলেন, আমার বোন মারা যাওয়ার পর ইউপি সদস্য খলিল মিয়া কার্ড নিয়ে গেছেন। এরপর আর কিছুই জানাননি।
একই গ্রামের ২১৯ নম্বর তালিকায় থাকা আমিনা মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। তার ছেলে জুলহাস জানিয়েছেন, মা যে বয়স্ক ভাতা পেতেন, তা-ই তো জানি না।
শুধু এরাই নন, তালিকায় নাম রয়েছে সখিনা, নবাব আলী, জয়গন বেওয়া, ছাহেরা, আজিরন, জোয়াহের, নবিরন, হামিদ, মান্নান, মাজেদা, উদয় ভানু ও জমিলা খাতুনসহ আরও অনেকের, যারা মারা গেছেন এরইমধ্যে।
এ বিষয়ে ঘাটাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দর আলী বলেন, মৃত ব্যক্তিদের নামে বয়স্ক ভাতার টাকা উঠানো হয় আমি এমনই জানি।
[৭]অগ্রণী ব্যাংক ঘাটাইল শাখার ম্যানেজার মো. শামছুল হক বলেন, যারা সশরীরে ভাতা বই নিয়ে উপস্থিত হন, তাদের আমরা ভাতার টাকা দিই। এছাড়া কেউ জীবিত আছেন, কিন্তু অসুস্থ, সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন দিলে সে লোকের টাকাও দিই।
[৮]উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের মৃত ব্যক্তির তথ্য ও বই ফেরত না দিলে আমরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি না। মৃত্যুসনদ দেন চেয়ারম্যান। আর ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রাপ্তদের শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে সব ধরনের ভাতা কমিটির সভাপতি থাকেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :