শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত

প্রকাশিত : ০১ মার্চ, ২০২০, ০৮:০১ সকাল
আপডেট : ০১ মার্চ, ২০২০, ০৮:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] সব খাবার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে?

বণিকবার্তা :  [২] মস্তিষ্কে রক্তবাহী নালি ফেটে রক্তক্ষরণ বা রক্তনালি বন্ধ হওয়ার দুর্ঘটনা হলো স্ট্রোক। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বিকল হয়ে যায়। স্ট্রোকের ফলে মৃত্যুঝুঁকি যেমন আছে, তেমনি আছে শরীরের কোনো অঙ্গ, এক পাশ বা পুরো শরীর প্যারালাইজড হওয়ার ঝুঁকি। আজকাল তুলনামূলক কম বয়সী অনেকেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। নতুন একটি গবেষণায় কিছু খাবারের মধ্যে হেমোরেজিক (রক্তক্ষরণ) ও ইস্কিমিক (রক্তনালি বন্ধ) স্ট্রোকের ঝুঁকি পাওয়া গেছে। গবেষণাটিতে গভীরতম অনুসন্ধানে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রোকের সঙ্গে নিম্ন ঝুঁকির খাবারগুলোও বেরিয়ে এসেছে।

[৩] স্ট্রোক এখন পুরো পৃথিবীতে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। প্রতি ২০ জনের মৃত্যুর মধ্যে একজন এ রোগে মারা যাচ্ছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, কেবল যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর আট লাখের বেশি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় এবং এর ফলে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্ট্রোক প্রতিরোধের কৌশলগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

[৫] আরো বেশি ব্যায়াম করা, ধূমপান ছেড়ে দেয়া, বেশি পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খাওয়া এবং পনির, বার্গার ও মিষ্টির মতো কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার এড়ানোর অভ্যাস কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। যাই হোক, এ কৌশলগুলো কি সব ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে? যদিও সব স্ট্রোক এক নয়, বিভিন্ন ধরনের স্ট্রোক রয়েছে।

[৬] নতুন গবেষণায় গবেষকরা স্ট্রোককে হেমোরেজিক ও ইস্কিমিক দুই ভাগে ভাগ করেছেন এবং খাবারগুলোকেও ভাগ করেছেন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন হেলথ বিভাগের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ টমি টং নতুন এ গবেষণার প্রধান ছিলেন, যা ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘটে ইস্কিমিক স্ট্রোক। স্ট্রোকের ৮৭ শতাংশ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ করা ধমনি যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন ইস্কিমিক স্ট্রোক হয়। অন্যদিকে হেমোরেজিক স্ট্রোক যখন ঘটে তখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ধমনি ফেটে যায় এবং রক্তক্ষরণ মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোয় সামগ্রিকভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি নির্ণয় করা হয়েছে। তবে নতুন গবেষণাটি স্ট্রোক ও খাদ্যকে কয়েক ভাগে ভাগ করেছে এবং ফাইবারের ওপর ফোকাস করেছে।

বিভিন্ন খাবার ও স্ট্রোকের ধরন অধ্যয়ন

গবেষণাটিতে ইউরোপিয়ান পারস্পেকটিভ ইনভেস্টিগেশন ইনটু ক্যান্সার অ্যান্ড নিউট্রিশনের (ইপিআইসি) তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। নয়টি ইউরোপীয় দেশের ৪ লাখ ১৮ হাজার ৩২৯ জনের বেশি মানুষের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা তাদের অভ্যাসগত ডায়েট, লাইফস্টাইলের উপাদান, চিকিৎসার ইতিহাস ও সোসিওডেমোগ্রাফিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের গড়ে ১২ দশমিক ৭ বছর ধরে অনুসরণ করেন।

এ সময়ে ইস্কিমিক, হেমোরেজিক ও অন্যান্য মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ৩৭৮টি স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৪ হাজার ২৮১টি মারাত্মক ইস্কিমিক স্ট্রোক এবং ১ হাজার ৪৩০টি হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে। গবেষকরা লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস, হাঁস, মুরগি, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, ফল ও শাকসবজি, বাদাম, বীজ ও ডায়েটারি ফাইবার গ্রহণের সঙ্গে জড়িত ইস্কিমিক ও হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকির অনুপাত নির্ণয় করতে পরিসংখ্যানমূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছিলেন।

ডিম হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে

সামগ্রিকভাবে গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, ফাইবার, দুধ, পনির বা দইয়ের মতো খাবারগুলো গ্রহণ ইস্কিমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাসের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষত প্রতি ২০০ গ্রাম অতিরিক্ত ফল ও শাকসবজি গ্রহণে ইস্কিমিক স্ট্রোকের তুলনামূলক ঝুঁকি ১৩ শতাংশ হ্রাস এবং প্রতি ১০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৩ শতাংশ হ্রাস করে।

একটি সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লেবুজাতীয় ফল, আপেল ও নাশপাতির মতো শক্ত ফল, কলা, ফলমূলজাতীয় শাকসবজি ও শিকড়জাতীয় শাকসবজি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। তবে এটা পাতাজাতীয় শাকসবজি ও বাঁধাকপির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এছাড়া প্রতিদিন ২০০ গ্রাম দুধ ৫ শতাংশ, দিনে ১০০ গ্রাম দই ৯ শতাংশ এবং দিনে ৩০ গ্রাম পনির ১২ শতাংশ ইস্কিমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

অন্যদিকে ডিম খাওয়া উচ্চঝুঁকির হেমোরেজিক স্ট্রোকের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা দিনে গড়ে ২০ গ্রামের কম ডিম গ্রহণ করেন। দিনে অতিরিক্ত প্রতি ২০ গ্রাম ডিম গ্রহণে ২৫ শতাংশ হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষক টমি টং বলেন, আমাদের নতুন গবেষণাটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধানটি হলো ফাইবার, ফলমূল ও শাকসবজি বেশি গ্রহণ ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনার সঙ্গে জোরালোভাবে যুক্ত রয়েছে। এজন্য সাধারণ জনগণকে ফাইবার, ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণ বাড়ানোর সুপারিশ করা উচিত। যদিও বারবার বলার পরও মানুষ এগুলো মানছে না।

আমেরিকান হার্ট ফাউন্ডেশন একজন মানুষকে প্রতিদিন চারটি ফল এবং পাঁচটি শাকসবজি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, একজন ব্যক্তির দুই হাজার ক্যালরি ডায়েটের ওপর ভিত্তি করে দিনে ২৫ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা উচিত।

নতুন গবেষণার সমীবদ্ধতা হলো এ বিশ্লেষণ কেবল পর্যবেক্ষণমূলক। অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এটা প্রভাবিত হতে পারে। তার ওপর তথ্যগুলো কেবল একপর্যায়ে সংগৃহীত হয়েছিল এবং অংশগ্রহণকারীদের ওষুধ ব্যবহারের বিষয়ে গবেষকদের অ্যাকসেস ছিল না। আর এটা পৃথিবীর সব অংশে সমানভাবে সাধারণীকরণও হবে না, কারণ অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিল সাদা ইউরোপীয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়