শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০১ মার্চ, ২০২০, ০৭:৩৪ সকাল
আপডেট : ০১ মার্চ, ২০২০, ০৭:৩৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের শ্বসনতন্ত্রের রোগে ভোগার প্রবণতা বেশি

বণিক বার্তা:  [২] ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রতিদিন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টন। এ বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার কাজে যুক্ত রয়েছেন প্রায় নয় হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। যথাযথ সুরক্ষা ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রায়ই নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে হয় তাদের। বিশেষ করে শ্বসনতন্ত্রের নানা রোগের প্রকোপ ঢাকার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মধ্যে বেশি।

[৩] তিন বছর ধরে দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে আসছে ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতাল। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তাদের ৬০ শতাংশই ভুগছিলেন শ্বসনতন্ত্রের নানা সমস্যায়।

[৪] সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখনো অনুসরণ করা হচ্ছে সনাতন পদ্ধতি। উপরন্তু পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দেয়া সুরক্ষা উপকরণও পর্যাপ্ত ও যথোপযুক্ত মানের নয়। এছাড়া তাদের মধ্যে এক ধরনের অসচেতনতাও কাজ করে। ফলে তাদের অনেকে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

[৫] সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের রেইনকোট, মাস্ক, গ্লাভস ও বুটজুতাসহ বিভিন্ন সুরক্ষা উপকরণ নিয়মিত সরবরাহের কথা। অভিযোগ রয়েছে, বেশ নিম্নমানের হওয়ায় এসব উপকরণ দু-তিন সপ্তাহের বেশি ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। নষ্ট হওয়ার পর নতুন উপকরণ পেতেও অনেক সময় লেগে যায়। অনেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন, যারা সুরক্ষা উপকরণ পাচ্ছেন না দু-তিন বছর ধরে।

সরেজমিন ঘুরেও গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর সড়ক পরিষ্কার করতে দেখা গেছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের। তাদের অনেকে কাজ করছিলেন খোলা নাকে ও খালি হাতেই। এমনই এক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সঙ্গে কথা হলো রামপুরা বাজার এলাকায়। সুরক্ষা উপকরণ ছাড়া বর্জ্য পরিষ্কারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বুটজুতা, গ্লাভস, জামা দেয়া হয় বছরে একবার। তা-ও অনেকে পান না। গায়ের জামাটা পেয়েছি দুই বছর আগে। গ্লাভস যেটা পেয়েছিলাম, দুই সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করা যায়নি। প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো রোগের জন্য ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে চিকিৎসার জন্যও কোনো টাকা দেয়া হয় না। এমনকি সারা মাস কাজ করার পর বেতনটাও ঠিকমতো পাই না।

চিকিৎসকরা বলছেন, সনাতন পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। উপরন্তু সুরক্ষা উপকরণগুলোও মানসম্মত ও যথাযথ নয়। ফলে সর্দি-কাশি অ্যাজমাসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা ছাড়াও প্রায়ই জ্বর, পেটের ব্যথা, চর্মরোগসহ নানা রোগে ভুগতে হয় তাদের।

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মধ্যে শ্বসনতন্ত্রের রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ এহতেশামুল হক বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রায়ই বর্জ্য অপসারণের সময় মাস্ক পরেন না। শুধু মাস্ক নয়, অনেক ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণই ব্যবহার করেন না তারা। ফলে দীর্ঘদিন এ পেশায় কাজ করতে গিয়ে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুসে ক্যান্সারসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অনেকেই। এছাড়া খালি হাতে এসব বর্জ্য অপসারণ করায় তাদের মধ্যে চর্মরোগের প্রকোপও বেশি। এমনকি তা ত্বকের ক্যান্সারেও রূপ নেয়ার ঝুঁকি থাকে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে মালিবাগের এক নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, নিজে ঠিকমতো খেতে পারি না, আবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা! সিটি করপোরেশন থেকে যে জিনিসগুলো পাই, সেগুলো দু-তিন সপ্তাহ ব্যবহার করেই নষ্ট হয়ে যায়। বড় কর্মকর্তাদের অনেকবার বলেও কোনো লাভ হয়নি। অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ছুটি মেলে না। গরিব মানুষের খোঁজ কেউ রাখে না। দুই বছর আগে একবার কিছু উপকরণ পেয়েছিলাম। সেগুলো এতদিন ভালো থাকে না। এ কারণে অনেকে এখন আর এসব ব্যবহারও করেন না।

বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে গ্লাভস, মাস্ক, বুটজুতা, অ্যাপ্রোনসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয় প্রতি বছর। তবে তারা (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) সেটা নিয়মিত ব্যবহার করে না।

সুরক্ষা উপকরণের সংকট ও তা বণ্টনে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় পেতে একটু দেরি হয়। পান না এ তথ্য সত্য নয়।

চিকিৎসা ব্যয় ও ছুটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা সরকারি কোনো কর্মী নন। মজুরির বিনিয়মে কাজ করেন। যে কারণে কেউ যদি ছুটি নেন, তাহলে আরেকজনকে কাজে দিয়ে যেতে হয়। এসব সমস্যা সমাধানে আমার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য সরকার থেকে গ্লাভস, বুটজুতাসহ সব সরঞ্জাম নিয়মিত দেয়া হয়। তবে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তাদের স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়ে সচেতন নন। এগুলো দেয়ার পর দু-একদিন ব্যবহার করে আর ব্যবহার করেন না। এছাড়া এগুলো ভালো করে সংরক্ষণও করেন না। এগুলো ব্যবহার করতেও এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়