শিরোনাম
◈ নতুন বিপদের সতর্কতা: প্লেট লকড, জমছে শক্তি—বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প সময়ের ব্যাপার মাত্র ◈ ভূমিকম্পের পর সাগরের বুক চিড়ে যেভাবে জেগে উঠেছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপ (ভিডিও) ◈ যেসব এলাকায় শনিবার ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না ◈ হাসিনার আপিল করার সুযোগ আছে: অ্যাটর্নি জেনারেল ◈ হবু স্বামীর মৃত্যুর দেড় বছর পর সন্তানের জন্ম, মাত্র ৯টি শুক্রাণু নিয়ে ইসরাইলি চিকিৎসকের অবিশ্বাস্য সফলতা! ◈ আ. লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কাকে ভোট দিবেন, নানা অলোচনা ◈ উগান্ডাকে হারিয়ে নারী কাবা‌ডি বিশ্বকা‌পের সেমিফাইনালে ভারত ◈ পরিচয় জানা গেল পুরান ঢাকায় ভূমিকম্পে নিহত ৩ জনের  ◈ মৃত্যুদণ্ড, নিষেধাজ্ঞা ও পলাতক নেতৃত্ব, নেই অনুশোচনাও—কোন পথে ফিরবে আওয়ামী লীগ? ◈ ঢাকার পুরোনো ভবনগুলোর ৯০ ভাগই বিল্ডিং কোড মানে নাই: রিজওয়ানা হাসান

প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:৪৬ সকাল
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:৪৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে

[২]বৃষ্টির পানি জমতে শুরু করলেই দেশে ভয়াবহ রূপে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিগত বছরে রোগটির প্রাদুর্ভাব রাজধানী ঢাকাতে শুরু হলেও ঈদযাত্রায় এটি সারা দেশে পৌঁছে যায়।

[৩]ফলে দেশের প্রায় সব স্থানেই ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ডিম রয়েছে। বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম গৃহীত হলে এসব ডিম ধ্বংস করা সম্ভব হতো। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

এতে বর্তমানে বিগত বছরের এ সময়ের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২ দশমিক ৭ গুণ। চলতি বছর বৃষ্টি শুরু হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, বিগত বছরের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলেও ভয়াবহতা আনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এখনই যদি জোরালোভাবে দেশব্যাপী মশক নিধন অভিযান শুরু, প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক কিটসের সরবরাহ নিশ্চিত এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্ধিত ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা যায় তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

[৪]বিশিষ্ট মাইক্রোবায়োলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মো. শেখ শহীদ উল্লাহ (পিএইচডি) বলেন, গত বছর ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানেই তারা গেছে সেখানেই ডিম পেড়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে এসব ডিম সুপ্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে পারে। যখনই বৃষ্টি পড়ে পানি জমতে শুরু করবে, তখন ওই ডিম থেকে মশা বেরিয়ে আসবে। ফলে এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এখনই সারা দেশে ডেঙ্গুর সম্ভাব্য প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম) ডা. আয়েশা আক্তার জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ১৯৯ জন।

অথচ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মাার্চে ১৭ জন। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম ৩ মাসের তুলনায় এ বছর জানুয়ারিতে রোগীর সংখ্যা ২ দশমিক ৭ গুণ বেশি।

[৫]রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরে ‘এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’র ডেঙ্গু মৌসুম পরবর্তী জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর মহামারী আকার ধারণ করতে পারে।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটির ১১টি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২, ১৬, ২৮, ৩১ ও ১ এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো সূচক মিলেছে ২০ পয়েন্টের বেশি।

উত্তরের শুধু ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এ সূচক মান ৩০। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২ শতাংশ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১০ শতাংশ ওয়ার্ডে এডিসের ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি রয়েছে।

[৬]এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে এ বছরও ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতে পারে।

কর্মশালায় স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১৭ সালের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৮ সালে বর্ষা পরবর্তী জরিপ হয়নি। তবে সব ইনডেক্সেই ২০১৭ সালের চেয়ে এবার ব্র“টো ইনডেক্স ইতিবাচক। মশার উপস্থিতি, ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা আগের বছরের তুলনায় কম পেয়েছি।

মশা নিয়ন্ত্রণে মশার প্রজনন উৎসে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যদি পানি জমতে দেয়া না হয় তাহলে মশার লার্ভাই হতে পারবে না। মশার উৎস ধ্বংস না করা হলে শুধু লার্ভিসাইডিং করে মশা কমানো যাবে না। নাগরিকদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

[৭]বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর এ চৌধুরী বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর এডিস মশা এবং ডেঙ্গু ভাইরাস দুটোর উপস্থিতিই বেশি। ভাইরাসের বাহক এডিস এলবোপিক্টাস এবং ইজিপ্ট দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই আছে। এতেই ধারণা করা যায়, এটা দেশব্যাপী বিরাজমান এবং মৌসুমে ছড়িয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট প্রিন্সিপাল অনুসারে সারা দেশে সার্ভিলেন্স করা দরকার ছিল। সেই অনুসারে এডিস নির্মূল কর্মসূচি গ্রহণ করতে হতো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। এখন যেসব জায়গা থেকে রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সেসব এলাকায় হিট করতে পারলে ভাইরাস এবং বাহক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য শক্তিশালী ফোগিং মেশিন ও কার্যকর কীটনাশক প্রয়োজন। সেই ব্যবস্থাও করেনি সিটি কর্পোরেশন। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

[৮]মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) তথ্য মতে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে। এশিয়া, প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চল, আমেরিকা, আফ্রিকা ও ক্যারেবীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০টি দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৫ লাখ মানুষ হেমোরেজিক জ্বরে ভোগে আর কমপক্ষে ২২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশই শিশু।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছিলেন শিশু, শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালে ডেঙ্গু সন্দেহে আইইডিসিআর-এ ২৭৬ জনের মৃত্যুর তথ্য আসে। বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনায় এর মধ্যে ১৭৯ জনের ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ওই ৮ বছরে কখনোই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ায়নি। ২০১৫ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে কিছুটা কমে ২০১৮ সালে আবার বেড়ে যায়।যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়