মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা প্রতিনিধি : [২] কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের (কুভিক) অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ রসায়ন, পদার্থ ও গণিত বিভাগে ব্যবহারিক চূড়ান্ত পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ব্যবহারিক পরীক্ষা বাবদ রসায়ন বিভাগে ৩’শ, পদার্থে ৪’শ এবং গণিত বিভাগে ৫’শ ২০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

[৩] খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পদার্থ, ২৫ ফেব্রুয়ারি রসায়ন বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি গণিত বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন প্রকার রশিদ ছাড়াই নগদ টাকার মাধ্যমে ব্যবহারিক খাতা জমা নিচ্ছে উক্ত বিভাগগুলো। বিভাগের শিক্ষকদের এমন কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থ ফিরিয়ে দেয়া হোক।
তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের দাবি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস করানো হয়েছে। ওই ক্লাসের ফি নেওয়া হচ্ছে।

[৪] ব্যবহারিক পরীক্ষা ও কলেজের অন্যান্য (ইনকোর্স) অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় নাম্বার কম দেওয়া হবে, এই ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রসায়ন বিভাগের একাধিক ছাত্র-ছাত্রী জানান, আমাদেরকে ব্যবহারিক বিষয়ে ক্লাস করানো হয়। এসব ক্লাসের বিনিময়ে কোনো ফি নেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু এই ব্যবহারিক ক্লাসের ফি, বিভাগের উন্নয়ন ফিসহ নানা খাতের কথা বলে অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষার পূর্বেই বাধ্যতামূলক ফি আদায় করছে বিভাগের শিক্ষকরা। টাকার বিনিময়ে শিক্ষকরা ব্যবহারিক পরীক্ষায় নাম্বার দিয়ে থাকেন।

[৫] সাজ্জাদ (ছদ্মনাম) নামে রসায়ন বিভাগের মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী জানান, অনেক আগে থেকেই রসায়ন বিভাগসহ বিজ্ঞান অনুষদের প্রত্যেকটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় নাম্বারের ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছে শিক্ষকগণ। নিজ নিজ বিভাগের স্যাররা এই টাকায় পরীক্ষার দিন ভুড়িভোজ ও ভাগবাটোয়ারা করে থাকেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখে এসেছি, টাকা দিতে কোনো শিক্ষার্থী আপত্তি জানালে তাকে পরীক্ষায় প্রাপ্য যথাযথ নাম্বার দেওয়া হয়না। তাই নাম্বার কম পাওয়ার ভয়ে শিক্ষার্থীরা তা প্রকাশ করেনা।

[৬] শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয় স্বীকার করে কুভিকের পদার্থ বিভাগের প্রধান বিজয় কৃষ্ণ রায় বলেন, ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য কলেজ থেকে যে অর্থ ধার্য করা হয়, সেই টাকা দিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে নিতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ৩’শ টাকা হারে নেওয়া হচ্ছে। যে শিক্ষার্থী ৪’শ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছে সে ভুল বলেছে।

[৭] গণিত বিভাগের প্রধান মুনির আহম্মেদ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৫’শ ২০ টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যে। কিন্তু গণিত বিভাগের স্টাফ ওজায়ের (যিনি শিক্ষকদেও নির্দেশে এই টাকা শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করছেন) এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ব্যবহারিক খাতা জমা দেওয়ার সাথে ৫’শ ২০ টাকাও জমা দিতে হবে নতুবা খাতা জমা নেওয়া হবেনা ।

[৮] রসায়ন বিভাগের প্রধান সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা মোতাবেক টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর বাহিরে কোন অতিরিক্ত অর্থ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়না।

[১০] অভিযুক্ত বিভাগগুলোর বিষয়ে জানতে ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রুহুল আমিন ভূঁইয়া জানান, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।