সাঈদ তারেক : রাজনীতিতে ‘মূল্যায়ন’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। আগে মূল্যায়ন বলতে বোঝানো হতো দলে নেতা-কর্মীদের যোগ্যদের যোগ্য পদে বসানো। নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার প্রশ্নেও এই ‘মূল্যায়ন’ কথাটা আসতো। আর এখন মূল্যায়ন বলতে বোঝায় টাকা কামানোর জায়গায় বসানো। এভাবেই ক্ষমতাসীন দলগুলোয় নেতা কর্মীরা ‘মূল্যায়িত’ হয়ে আসছেন।
মূল্যায়িত হয়ে তারা কেউ সরকারি পদপদবি পায় কেউ ব্যাংকের মালিক পরিচালক হয়, আধা সরকারি স্বায়ত্ব-শাষিত সংস্থায় বড় পদ বাগায়। তারপর ব্যাংকলোন লাইসেন্স পারমিট এজেন্সি হাতায়। তারাই রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত। গত এক দশকে এই দুর্বৃত্তগুলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘মুল্যায়িত’ হতে হতে দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে। জাতির হাতে ধরিয়ে দিয়েছে মুলা! সরকারি প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোয় একটা কথা বেশ শোনা যায়, ‘প্রাইজ পোস্টিং’।
মানে ঘুষের বা অবৈধ পন্থায় টাকা কামানোর ঊর্বর ভূমিতে বদলি। সাধারণত যাদের ওপর কর্তৃপক্ষ খুশি থাকে বা যারা নানা সেবার মাধ্যমে উপর মহলকে সন্তুষ্ট করতে পারেন তারাই ওইসব ‘প্রাইজ পোস্টিং’ পান। একটা প্রাইজ পোস্টে বছর তিনেক থাকতে পারলে তার আর বাকি জীবন কিছু না করলেও চলে। এই প্রাইজ পোস্টিংকে এক দিক দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও বলা যায়। কারণ ঘুষ খাবে দুর্নীতি করবে অবৈধ পন্থায় সম্পদ আর্জন করবে- এসব জেনেও এবং ওই কাজগুলো করানোর উদ্দেশ্যেই যখন ‘প্রাইজ পোস্টিং’গুলো দেওয়া হয় তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া আর কি বলা যায়! রাজনীতিতে তথাকথিক ‘মূল্যায়ন’ এবং সরকারে ‘প্রাইজ পোস্টিং’য়ের চল যতোদিন বন্ধ না হবে ততোদিন সুশাসন, শৃঙ্খলা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ আশা করা বাতুলতামাত্র।
আপনার মতামত লিখুন :