আকতার বানু আলপনা : একুশে ফেব্রুয়ারির ব্যানারে বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। আমি এই অজ্ঞতার কারণ নিয়ে ভাবছিলাম। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পর্যন্ত আমাদের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে যাচ্ছেন? কেন আমাদের অহংকারের আর কৃতজ্ঞতার উৎস আমাদের শহীদদের সেই মুখগুলো আমরা আর চিনতে পারছি না? লেবু বেশি কচলালে তেতো হয়ে যায়। আমাদের অবস্থা হয়েছে তাই। আমরা ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধকে এতো বেশি কচলেছি যে, এখন আর এই দুইটাকে আলাদা করতে পারি না। এই দুটোর গুরুত্ব এখন নানা স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো এখন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার জায়গা থেকে সরে গিয়ে দিবস পালনের অজুহাতে পরিণত হয়েছে। সাজুগুজু করে ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা ফেসবুকে দেওয়ার জন্য শহীদ মিনারে ফুলের তোড়া হাতে ছবি তোলার উপলক্ষ বানানো হয়েছে।
প্রতিটা ক্লাসে একই ইতিহাস বারবার পড়িয়ে পড়িয়ে আমরা ইতিহাসের প্রতি বাচ্চাদের শ্রদ্ধা ও দেশপ্রেমের পরিবর্তে বিরক্তি তৈরি করছি। যারা পাঠ্যবই তৈরি করেন, তারা ভুলে যান (বা ভুলতে বাধ্য করা হয়) যে, শ্রদ্ধা জোর করে বা বারবার পড়িয়ে আত্মস্থ করার বিষয় নয়। শ্রদ্ধা আসে ভেতর থেকে, মন থেকে। আর এই শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে দেয় শিশুর পরিবার। পাঠ্যবই এখানে কিছুটা সহযোগীর ভূমিকা পালন করে মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। তাই একই ইতিহাস এতোবার পড়ানোর কোনো দরকার নেই। বরং শিশুদের বইতে বেশি বেশি গল্প, ছড়া, কবিতা, ছবি থাকতে হবে, যাতে তারা আনন্দের সঙ্গে শিখতে পারে, পড়তে চায়। বড়দের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার আরও একটি বড় কারণ আছে। প্রতিটা দিবস পালনের জন্য সরকার থেকে চাপ আসে।
অনেকটা বাধ্য করা হয়। এটিও সমীচীন নয়। এ রকম জিনিসগুলো হতে হয় স্বপ্রণোদিত। এ রকম কোনো কাজ করতে বাধ্য করা হলে তখন সেটির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতার পরিবর্তে বিরক্তি আসা স্বাভাবিক। তখন সেই কাজটি দায়সারাভাবে করার মানসিকতা তৈরি হয়। ফলে এ ধরনের ভুল হয়। ছোটবেলায় আমাদের দিবস পালনের জন্য স্কুল থেকে বাধ্য করা হতো না। আমরা আব্বার হাত ধরে, কখনো নিজেরাই খুব ভোরে একটা/দুইটা ফুল হাতে নিয়ে খালি পায়ে শহীদ মিনারে যেতাম। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাসহ সেই একটা/দুইটা ফুল দিয়ে মনে হতো আমার স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকারী বীরদের প্রতি কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। তাদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করলাম। এখনকার শিশুদের বা বড়দের মনে কি এ রকম অনুভূতি হয়? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :