বাকী বিল্লাহ : দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পাঠরত শিক্ষার্থীদের দাঙ্গা পুলিশের ব্রুটাল নির্যাতনের ভিডিও দেখার পর থেকে চিন্তাজুড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের কারও জন্যই নতুন নয় এ ধরনের দৃশ্য, রাষ্ট্রীয়, জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের দৃশ্যাবলীতে পৃথিবী বোঝাই হয়ে আছে। এ ধরনের প্রতিটি নতুন দৃশ্য চিন্তার অস্থিরতার বোঝার উপর আরেকটি শাকের আঁটি চাপিয়ে দেয়। এই পুরো অঞ্চলজুড়ে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বাড়-বাড়ন্তের ভরা মৌসুমে ঘটনাবলীর এ রকম একটি টুকরোই ভবিষ্যতের আরও বেশি উগ্রতা ও বর্বরতার জ্বালানি হয়ে দাঁড়ায়। এমনিতেই সমাজ র্যাশনালিটি থেকে তুলনামূলক দূরে থাকায় নানা ধরনের অক্ষম ক্রোধে ভোগে অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে তারা বিরোধী পক্ষের লোক ভেবে বসে থাকে। কিন্তু বাস্তবে আমরা যে তাদেরই পক্ষের, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মুসলমানের কোনো মঙ্গল নেই, ফায়দা কেবল ধর্ম বেসাতিদের এই সরল সাদামাটা সত্যটা দেখার চোখই হারিয়ে ফেলে তারা। ঠিক যেমন দশা হয়েছে ভারতের বিপুল সংখ্যক সাধারণ হিন্দু জনতার। মোদী জামানায় তাদের দুর্দশা-দুর্গতির অন্ত নেই, তারপরও দিনরাত কেবল হিন্দুত্ববাদ খাইয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে।
মনে পড়ছে বছর কয়েক আগে একদিন কথা হচ্ছিলো কলকাতার অধ্যাপক ও বাংলা পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা গর্গা চ্যাটার্জীর সঙ্গে। গর্গরা বাংলা পক্ষ তখন সবে শুরু করেছেন। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশে মূর্তি ভাঙা এবং অন্যান্য সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের খবর তাদের কাজ কতোটা কঠিন করে দেয়। তারা বাঙালিত্বকে প্রধান হাতিয়ার করে হিন্দু-মুসলমান ঐক্য গড়ার কাজ করছেন। বলে রাখা দরকার, জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে তাদের অনেক অ্যাকশনের সঙ্গেই পুরোপুরি একমত নই। তবে গর্গরা ইতোমধ্যে সফলভাবে দেখাতে পেরেছেন, হিন্দুত্ববাদ মোটা দাগে হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই শত্রু। পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি ও ক্যাববিরোধী বড় বড় বিক্ষোভ দেখেছি আমরা। কিন্তু ওইটাই যে ওখানকার সমাজের আসল চিত্র, তা কিন্তু মোটেও নয়। বিজেপির ভাগ করার রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গেও বড় দাগ কেটেছে। ওখানেও হিন্দুত্ববাদী উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে অসংখ্য মানুষ। এই অঞ্চলে হিন্দু বা মুসলমান হয়ে জন্ম নেওয়া মানেই হচ্ছে, পূর্বতন ইতিহাসের বিপুল অসুখ-বিসুখ ও দায়-দেনার উত্তরাধিকার হওয়া, জন্মসূত্রে। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে কি আছে ভবিষ্যতে? সব ভবিষ্যৎই অতীতকে ছাড়িয়ে যায়। এই বাক্য লিখে ভালো ভালো কথাও মনে আসতে পারতো। কিন্তু সময়টা বড্ড বেশি খারাপ। শুধু খারাপ আশঙ্কাই জাগতে থাকে কেবল। মনে হয় ভবিষ্যতের খারাপ অতীতের খারাপকেও ছাপিয়ে যাবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :