আর রাজী : একসময় এই আকাক্সক্ষা নিয়ে কোনো দ্বিধা ছিলো না যে, বাংলাদেশে সব স্তরের শিক্ষার প্রধান ভাষা হতে হবে বাংলা। শিক্ষার মাধ্যম কী হবে সে প্রশ্নের ফয়সালায়, যুক্তি-তর্ক-জনমতের সঙ্গে রক্তও দিতে হয়েছিলো এ দেশের মানুষকে। মহাবিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ছিলো সে লড়াইয়ের পুরোধা। কিন্তু আজও এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই কোনো প্রত্যন্ত জনপদের নবীন যুবা যখন ভর্তি হন, তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই তরুণের শিক্ষার্জনের পথে প্রধান যে অন্তরায় দাঁড় করিয়ে দেয়, তার নামÑ ভাষা। আজও এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তার শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষায় শিক্ষা দিতে প্রবলভাবে অনিচ্ছুক। নানা অজুহাতে মুষ্টিমেয় মানুষের দখলে থাকা ঔপনিবেশিক ভাষাকে শিক্ষাদানের বাহন করে রেখে চরম এক বৈষম্যকেই জিইয়ে রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষার নামে অশিক্ষা-কুশিক্ষা-ভুয়া শিক্ষা ছড়িয়ে দিচ্ছে এই পরভাষার আড়াল নিয়েই। এই অশিক্ষা-কুশিক্ষা আর ভুয়া শিক্ষার কারিগর কারা আমরা তা জানি, বুঝি। বাংলায় তারা বইপত্তর-প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেন না, পড়ানোর জন্য বাংলা ভাষাকে উপযুক্ত করে তৈরি করার সামান্য দায়ও বোধ করেন না, টুটাফাটা ইংরেজি ভাষা, আর ইংরেজি-বাংলার মিশেল দেওয়া এক খিচুড়ি-ভাষায় তারা পাঠদানের কাজটি সারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযুক্ত বইপুস্তক বাংলা ভাষায় না থাকার অজুহাত আজও তারা নির্লজ্জের মতোই ব্যবহার করেন। সবচেয়ে হাস্যকর হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় সবগুলো বিভাগের পাঠ্যক্রমগুলো আজও বাংলা ভাষায় প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়ে উঠেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই যদি এই কাজ না করে বা না পারে তাহলে আর কার কাছে আশা করতে পারি আমরা? জাগবে কি এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? তাদের শিক্ষার্থীদের পড়াবে কি বাংলা ভাষায়? এই দাবি ফের জানাবে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা? ভাষার অধিকার আদায়ে, স্বভাষায় শিক্ষালাভের দাবিতে রক্ত দিতে কি সক্ষম হবে বাংলা মা’য়ের তরুণ সন্তানরা? যতোদিন তারা তা না পারবে, ততোদিন এই দেশের সাধারণ মানুষের সন্তানরা ভাষার ফাঁদে পড়ে খাবি খাবেই, শিক্ষা অধরাই থাকবে তাদের। শহুরে উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের ইংরেজি জানা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অনুকূলে টিকে থাকবে এক বীভৎস্য বৈষম্য। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :