প্রিয়াংকা আচার্য্য : ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা ও ফরিদপুরের কারাগারে বন্দী ছিলেন। তখন মাসজুড়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে ছাত্রদের মধ্যে নানা বিক্ষোভ কর্মসূচি ও আন্দোলন চলতে থাকে। সেইসব আন্দোলনে নানাসময়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির দাবিও উঠে আসে। তখনকার দৈনিক আজাদ পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেশ কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়।
এখানে সেই বিশেষ খবরগুলো উল্লেখ করা হলো:
১ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়, রাষ্ট্রভাষা সমস্যা পর্যালোচনার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বার লাইব্রেরিতে এক সর্বদলীয় কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন সম্প্রতি পল্টন ময়দানে যে ঘোষণা করেছিলেন, সম্মেলনে তার প্রতিবাদ করা হয় এবং বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য জোর দাবি জানানো হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পরিচালনার জন্য সভায় ৪০ জনের ওপর সদস্য নিয়ে একটি সর্বদলীয় কর্মপরিষদ গঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, তমুদ্দন মজলিশ, ইসলামী ভাতৃসংঘ, যুবসংঘ, নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও পূর্ব পাকিস্তান মোহাজের সমিতির কর্মী ও নেতৃবৃন্দ এবং শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্মেলনে অংশ নেন।
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে অবিলম্বে নিরাপত্তাবন্দী শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য আটক বন্দীর মুক্তি এবং জননিরাপত্তা আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারি ‘শেখ মুজিবের অনশন ধর্মঘট’ শিরোনামের খবর-পূর্ব পাকিস্তান মোছলেম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রচারপত্রে বলা হয়েছে যে, ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে নিরাপত্তা বন্দী শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দীন আহমদ জেলখানায় আমরণ অনশন ধর্মঘট আরম্ভ করেছেন। অসুস্থতার জন্য শেখ মুজিবুর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। উক্ত স্মারকলিপিতে তিনি বলেছিলেন যে, যেহেতু প্রকাশ্য আদালতের বিচারে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেন নাই, সুতরাং নিরাপত্তা আইন অনুসারে তাদের আটক রাখা ‘অন্যায় ও নীতিবিরুদ্ধ’। ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁকে মুক্তি দেয়া না হলে তিনি ঐদিন থেকে অনশন ধর্মঘট আরম্ভ করবেন বলে স্মারকলিপিতে জানিয়েছিলেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি ‘নিরাপত্তা বন্দীদের অনশন ধর্মঘট, স্বাস্থ্যের অবনতি সম্পর্কে মওলানা ভাসানী’ শিরোনামে খবরটি ছিলো-নিরাপত্তা বন্দীদের অনশন ধর্মঘট সম্পর্কে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছেন: ‘আমি জানিতে পারিয়াছি যে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে নিরাপত্তাবন্দী শেখ মুজিবুর রহমান ও মহীউদ্দীন আহমদ আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন। জনসাধারণ অবগত আছেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন থেকে মারাত্মক রোগে ভুগছিলেন এবং কিছুদিন পূর্বে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু রোগ মুক্তির পূর্বেই তাকে আবার জেলে প্রেরণ করা হয়। মহীউদ্দীনের স্বাস্থ্যও দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে, এই অনশন কর্মসূচী তাদের ভগ্ন স্বাস্থ্যের কী পরিণতি ঘটাবে। তাদের আটক রাখার সম্মন্ধে কর্তৃপক্ষের অনমনীয় মনোভাব দেখে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। আমি মানবতার নামে সরকারের কাছে এই আবেদন করছি যে, অন্তত আশংকাজনক স্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়েও যেন তারা মুজিবুর রহমান ও মহীউদ্দীনকে মুক্তি দান করেন।’ সম্পাদনা : রেজাউল আহসান
আপনার মতামত লিখুন :