শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৫:২৫ সকাল
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৫:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যারা এনেছিলো বিজয়, প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন মায়ের মুখের ভাষা বাংলা

হিমেল রোজারিও : ২] ৫২’র ভাষা আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছে অনেকে। তাদের মধ্যে পাঁচজন ভাষা শহীদের নাম আমরা সবাই কমবেশি জানি। তারা হলেন আবদুস সালাম, রফিক উদ্দীন আহমদ, শফিউর রহমান, আবুল বরকত ও আবদুল জব্বার। এ ছাড়া আরও তিনজন ভাষা শহীদের পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষ্যে তা প্রমাণিত হয়। তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো : ৩] আবদুস সালাম ফেনীর লক্ষণপুর গ্রামে ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। আর্থিক দৈন্যতার কারণে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর কলকাতা বন্দরে কিছুদিন কাজ করেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার পরে ঢাকায় এসে আজিমপুরে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের ‘পিয়ন’ হিসেবে কাজ শুরু করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে মিছিলের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভে অংশ নেন। ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালালে অন্যদের সঙ্গে আবদুস সালামও গুলিবিদ্ধ হন। দেড় মাস চিকিৎসার পর ৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা শহীদ সালামকে ২০০০ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া বিভিন্ন স্থান এবং প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় সালামের নামে। ৪] ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলীর কোন্নগর গ্রামে শফিউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার পর পিতার সঙ্গে ঢাকায় এসে বি.এ ক্লাসে ভর্তি হন এবং ঢাকা হাইকোর্টে হিসাবরক্ষণ শাখায় চাকরি করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে দশটার দিকে নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে শফিউরের কলিজা ছিঁড়ে গিয়েছিলো। অতিরিক্ত রক্তক্ষণে শফিউর সন্ধ্যা ৬টায় মারা যান। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত বারোটায় আজিমপুর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার শফিউর রহমানকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন। ৫] ২১ ফেব্রুয়ারি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আবুল বরকত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে ১৯২৭ সালের ১৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকার পুরানা পল্টনে মামা আব্দুল মালেকের বাসায় আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ হতে দ্বিতীয় বিভাগে চতুর্থ শ্রেণিতে পাস করার পর এম.এ শেষ পর্বে ভর্তি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলি চালালে হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল বরকত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৬৪ সালে বরকতের মা পরিবার নিয়ে বাংলাদেশের গাজীপুরের বাবলা বিথিতে নিবাস গড়ে তোলেন। শহীদ আবুল বরকতকে ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালাটি ২০১২ সালে উন্মুক্ত করা হয়। তার জীবনী নিয়ে বাহান্নর মিছিল নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। ৬] ময়মনসিংহ গফরগাও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল জব্বার। অর্থের অভাবে তিনি পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পরেননি। কিছুদিন নারায়ণগঞ্জে এবং পরে ইংরেজের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বার্মায় (মিয়ানমার) ১২ বছর চাকরি করেন। দেশে ফেরার পর পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ডে (পিএনজি) যোগদান করেন। ময়মনসিংহ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে নিজ গ্রামে ‘আনসার কমান্ডার’ হিসেবে কাজ করেন। শাশুড়ি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন জব্বার। হাসপাতালে তার শাশুড়িকে সেবা প্রদানের সময় ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে। মিছিলটি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আসলে জব্বার তাতে যোগদান করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে এবং জব্বার গুলিবিদ্ধ হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারকে ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।
৭] মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের পারিল গ্রামে ১৯২৬ সালে ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন রফিক উদ্দীন আহমদ। জগন্নাথ কলেজে (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র থাকাকালে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করে। রফিক ভাষা আন্দোলনের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন এবং সক্রিয় একজন আন্দোলনকারী হিসেবে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গণে আসলে পুলিশ গুলি চালায়, এতে রফিক উদ্দিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ২০০০ সালে ভাষা শহীদ রফিককে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন বাংলাদেশ সরকার। তথ্যসূত্র : দৈনিক সংবাদ, হাসান মাহামুদ, রাইজিং বিডি.কম, উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়