আক্তারুজ্জামান : বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার আমেজে ক্রিকেটপাড়া বেশ গমগম করছে। আর দেশের ক্রিকেটপাড়া খ্যাত ঢাকার মিরপুরের সে উৎসবে নেই রাজধানীর কোনো ক্রিকেটার! ব্যাপারটা একটু খটকা লাগার মতো। তবুও এটাই সত্য। এক সময় দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ক্রিকেটার আসতো ঢাকা থেকে। কিন্তু এখন সেটা নেই। পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ক্রিকেটারদের উপর ভর করে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় বেড়ে ওঠা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার দেশের ক্রিকেটে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তার মধ্যে আছেন- মোহাম্মদ আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফিস, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাহমুদ সুজন, জাভেদ ওমর, হান্নান সরকার, আতাহার আলী খান ও মেহরাব হোসেন অপির মতো তারকারা। যারা এখনো ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকলেও ক্রিকেটার গড়ে তুলতে পারছেন না। বর্তমান সময়ে তাসকিন আহমেদ ছাড়া আর কেউই জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন না।
এখন প্রশ্ন হলো- ক্রিকেটের সব আয়োজন ঢাকায় হলেও ক্রিকেটার কেন আসছে না? এ বিষয়ে দুদিন আগে কথা বলেছিলেন সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান একটি ক্লাবের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজধানীতে ক্রিকেট মূলত বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে। যার ফলে সিনিয়ররা সবাই ক্লাব গঠনে ব্যস্ত। দেশের ক্রিকেটের মান বাড়াতে কেউই তেমন কাজ করছে না।
কিন্তু এই ঢাকায় ছিলো ক্রিকেটার তৈরির আঁতুড়ঘর। উন্নত ক্যারিয়ার, উচ্চ জিপিএ আর অবকাঠামোগত সঙ্কটে মাঠ বিমুখ হয়েছে রাজধানীর কিশোর-কিশোরীরা। পরিবার থেকে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চাপ। ভালো ফলাফল বলতে যেটা বোঝায়, সেই জিপিএ ফাইভ! অর্জনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা এখানে মুখ্য। মুক্ত বাতাস গ্রহণের সময় নেই বদ্ধ এ নগরীতে। আছে সহপাঠি কিংবা প্রতিবেশির সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। রেজাল্ট একটু খারাপ মানেই জীবন শেষ! এটাই মা-বাবাদের মাথা ব্যথার কারণ।
ফলাফল ভালো করতে চেষ্টার অন্ত রাখছেন না পরিবারের অভিভাবকরা। নামী-দামি স্কুলে ভর্তি করানো, প্রাইভেট টিউটরের কাছে নিয়ে যাওয়া, কোচিং থেকে দৌঁড়ঝাপ করে ফিরে আবার হোম টিউটরের কাছে দু-তিন ঘণ্টা বসে থাকা, ব্যস! এতেই ভালো ফলাফল আসা করেন রাজধানীবাসি। কিন্তু তাতে মরে যায় স্বপ্ন, ফিঁকে হয় আশা আর জাতি পায় হতাশাচ্ছন্ন প্রজন্ম।
মা-বাবার স্বপ্ন আর আশা পূরণের পিছনে ছুটতে গিয়ে ব্যাট-বলের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে মাঠে যাবার ফুসরত পান না ছেলে-মেয়েরা। আর যেটুকু ফুসরত পান তাতে হয়তো মাঠ পান না। মাঠ পেলেও দৌঁড়াদৌঁড়িতে সীমাবদ্ধ থাকেন তারা। মেদযুক্ত শরীর আর বইভর্তি মাথা নিয়ে ক্রিকেটটা ঠিকভাবে খেলা হয় না। শুধু ক্রিকেট না কোনো খেলাতেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করা হয় না এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। যার ফলে রফিক, আশরাফুল, নাফিস কিংবা তাসকিনরা আর বেড়ে ওঠেন না।
প্রথমবার যুব বিশ্বকাপ জেতানো দলে ছিলো ১৬ ক্রিকেটার। যার মধ্যে একজনও ঢাকার ছিলেন না। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) আঞ্চলিক শাখা দিনাজপুর থেকে ছিলেন ৮ জন। এছাড়া বগুড়া, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও নড়াইলের ক্রিকেটারে ভর করে বিশ্বকাপের শিরোপা পেয়েছে বাংলাদেশ।
পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের প্রতিযোগীতায় নেমে শৈশব কৈশোর হারিয়েছে আমাদের সন্তানরা। সেই সঙ্গে হারিয়েছে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের সোনালী ভবিষ্যতের কিছু তারকা। বই আর রেজাল্টের পিছে ছুঁটতে গিয়ে মাঠে আর যাওয়া হয় না তাদের। তাই জন্ম হয় না নতুন আশরাফুল, রফিক, আতাহার আলী, নাফিস কিংবা তাসকিন আহমেদদের।
আপনার মতামত লিখুন :