শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:৫৫ সকাল
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:৫৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জীবননগরে গৃহহীনদের বিনা মুল্যের ৫৬ টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

জামাল হোসেন , জীবননগর প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় গৃহহীনদের বরাদ্দকৃত বিনা মুল্যেও ৫৬ টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘর নির্মাণে নিন্মামানের ইট,বালু,রড,নকশা পরিবর্তন ও সচ্ছলদেও মাঝে ঘর বরাদ্দ দেয়ায় সরকারের এ মহতি কাজ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জীবননগর উপজেলা ত্রান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসুচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দূর্যোগ সহনীয় ৫৬ টি ঘর হতদরিদ্রদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি ঘর হবে ২০ ফুট লম্বা ও প্রস্থ ৮ ফুট।

চারদিকে ইটের দেয়াল আর ওপরে টিনের ছাউনি। নিয়ম অনুযায়ী ঘরের ছাউনির কাজে মেহগুনি কিংবা কড়াই কাঠ ব্যবহার করতে হবে। ঘরের মেঝেতে তিন ইঞ্চি ঢালাই হবে। অন্যদিকে একই সাথে নির্মিত রান্না ও টয়লেট হবে ১৩ ফুট। ব্যবহৃত ইট হবে এক নম্বর এবং টিন হতে হবে পয়েন্ট ৪৬ মিলিমিটার পুরুত্বের রঙিন ঢেউটিন।

নানা অজুহাতে নির্মাণাধীন ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুবিধাভোগীদের মধ্যে ঘর হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটতে পারে। ঘর ও রান্না ঘরের মাঝখানে সাত ফুট করিডোর থাকতে হবে। যার ওপরে থাকবে টিনের ছাউনি। এ প্রকল্পের উপজেলা কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং প্রতিটি ঘরই একটি প্রকল্প। প্রতিটি ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে নয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। গঠিত ওই কমিটি ঘর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করবেন।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরজমিনে দেখা গেছে,প্রতিটি ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি মেনে নিয়েই সুবিধাভোগীরা ঘর পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন। ঘর নির্মাণের ব্যাপারে সুবিধাভোগীদের একাধিক ব্যাক্তির সাথে হলেও তারা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। আবার অনেক সুবিধাভোগী অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে আংশিক তথ্য দিলেও তাদের প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

এলাকার হতদরিদ্রদেরকে ঘর না দিয়ে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ব্যাক্তিদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ঘর দেয়া হয়েছে মর্মে অনেক চেয়ারম্যান-মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ঘর বরাদ্দ দিতে মোটা টাকা নেয়ার ব্যাপারে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন থাকলেও ভয়ে মুখ খুলছেন না ভুক্তভোগীরা। ঘর নির্মাণে সমস্ত ব্যয়ভার সরকার বহন করার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় ঘরের মাটি ও বালু ক্রয়ে ভুক্তভোগী টাকা দিতে হয়েছে এমনও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের সুটিয়া গ্রামের রিপন হোসেনের অভিযোগ তার নিকট থেকে ৪৭ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণে নকশা পরিবর্তন ও নিন্মমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুবিধাভোগীদের দাবী তারা ঘরের ব্যাপাওে মুখ খুললে পরে আর কোন সুবিধা তারা পাবে না। আবার পরে কোন ঝামেলায় পড়ে কিনা এমন আশঙ্কাও তাদের মধ্যে কাজ করছে। টাকা নিয়ে ঘর বরাদ্দ দেয়ার ঘটনা বাঁকা ইউনিয়ন ছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নেও ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ঘরই দেয়া হয়েছে দলীয় বিবেচনা আর স্বজনপ্রীতিতে।

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে নতুন চাকলার সুবিধাভোগী হাফিজুর রহমান হাফি বলেন,আমরা মুর্খ মানুষ কি ভাবে বুঝব ইট-বালু ভাল দিচ্ছে না খারাপ দিচ্ছে।

বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন,আমি বিধি অনুযায়ী হতদরিদ্রদের মধ্যে সরকারী ঘর বরাদ্দ দিয়েছি। কারো নিকট থেকে কোন টাকা পয়সা নিইনি। আমার নাম করে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে তার দায়-দায়িত্ব তো আর আমি নিব না। আমার নামে যারা এসব কাজ করে বেড়াচ্ছে তারা কোন ভাবেই টাকা নেয়ার ব্যাপারটি প্রমান করতে পারবে না। তবে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে আমার প্রতিপক্ষরা আমাকে সুবিধাভোগীদেরকে নানা ভাবে হুমকি ধামকী দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আদায়ের চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বড় কথা সব ইউনিয়নে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠলেও একটি চক্র শুধুই আমার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন,যে সব ইউনিয় ঘর বরাদ্দ পেয়েছে,তারা অনেকটাই বাধ্য হয়েই টাকা নিচ্ছে। কারণ প্রতি ঘরের অনুকুলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়। তাহলে তারা ওই টাকাটা পাবে কোথায়?

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টগর বলেন,আমি একা দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার দায়িত্ব পালন করে থাকি। একার পক্ষে দু’টি অফিসের সমস্ত কাজ সামাল দেয়া কঠিন। তারপরও কাজের ব্যাপারে অভিযোগ যখন উঠেছে,তখন পরিদর্শন করে জড়িতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন,বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধানের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে ঘর বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার ঘর নির্মাণের ব্যাপারে যে ভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সে ভাবেই করতে হবে। অন্যথায় অভিযোগ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়