ডেস্ক রিপোর্ট : নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বন্ধ হওয়ায় বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার কুঁচিয়া ব্যবসায়ীরা। কুঁচিয়া সংগ্রহ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পাঁচ শতাধিক পরিবার ব্যাংকঋণ ও দাদন পরিশোধ নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে।বণিক বার্তা
জানা গেছে, আগৈলঝাড়া থেকে আগে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪ কোটি টাকার কুঁচিয়া রফতানি হতো বিদেশে। রফতানির ৯০ শতাংশ হতো চীনে। বাকি ১০ শতাংশ হতো হংকং, তাইওয়ানসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকারে বিস্তারের কারণে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে চীনে কুঁচিয়া রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ায় সংকটে পড়েছেন উপজেলার কুঁচিয়া সংগ্রহকারী, ব্যবসায়ী ও রফতানিকাজের সঙ্গে জড়িত আড়তদারসহ পাঁচ শতাধিক পরিবার।
উপজেলার কুঁচিয়া ব্যবসায়ী সুশীল মণ্ডল, জয়দেব মণ্ডল, অর্জুন মণ্ডল, জহর মণ্ডল, ভীম মণ্ডল ও প্রদীপ বাড়ৈ জানান, তারা ঢাকার উত্তরা এবং টঙ্গীর কামারপাড়া ও নলভোগ এলাকার অর্কিড ট্রেডিং করপোরেশন, আঞ্জুম ইন্টারন্যাশনাল, গাজী এন্টারপ্রাইজসহ অন্য কুঁচিয়া রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করতেন। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কুঁচিয়া ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য স্থানীয় কুঁচিয়া ব্যবসায়ীদের দাদনে টাকা দেয়। ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে আগৈলঝাড়ার কুঁচিয়া ব্যবসায়ীরা ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাদন (সুদে বা তাদের কাছে কুঁচিয়া বিক্রির শর্তে) নিতেন। পরে রফতানিকারকদের কাছে কুঁচিয়া বিক্রির মাধ্যমে দাদনের টাকা পরিশোধ করতেন ব্যবসায়ীরা। এভাবেই স্থানীয়দের মধ্যে কুঁচিয়া চাষ বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে এ অঞ্চলে পাঁচ শতাধিক পরিবার কুঁচিয়া আহরণ, মজুদ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় চীনের সঙ্গে অন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো কুঁচিয়া রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়। বিপাকে পড়েন দাদন নেয়া কুঁচিয়া সংগ্রহকারী ও ব্যবসায়ীরা। রফতানি বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন কুঁচিয়া আহরণের সঙ্গে জড়িত শ্রমজীবী লোকজন। কর্মচঞ্চল কুঁচিয়া রফতানির আড়তগুলোয় বর্তমানে বিরাজ করছে শূন্যতা। কাজ না থাকলেও শ্রমিকদের মাসিক বেতন গুনতে হচ্ছে আড়তদাড়দের। অন্যদিকে শিগগিরই রফতানি শুরু না হলে মজুদ কুঁচিয়া মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা। একই কারণে নতুন করে সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে কুঁচিয়া কিনছেন না তারা। যে কারণে বেশির ভাগ গরিব জেলে এখন কুঁচিয়া সংগ্রহ করছেন না। ফলে আর্থিক অনটনের মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন ওইসব পরিবারের লোকজন।
সূত্রমতে, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কুঁচিয়ার স্বাভাবিক মৌসুম হলেও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস ভরা মৌসুম। কিন্তু ভরা মৌসুমের শুরুতেই নভেল করোনাভাইরাসের কারণে কুঁচিয়া ব্যবসায় পুরোপুরি ধস নামায় মহাবিপাকে পড়েছেন কুঁচিয়া আহরণ করা শ্রমিক, ব্যবসায়ী, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্ট আড়তের শ্রমিকরা।
কুঁচিয়া সংগ্রহকারী রাজিহার গ্রামের সুশীল রায় জানান, আগে আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে পুকুর, ডোবা-নালা, খাল-বিল থেকে কুঁচিয়া আহরণ করে প্রতিদিন ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতেন। বর্তমানে রফতানি বন্ধ হওয়ায় কোনো আড়তদার কুঁচিয়া কিনছেন না। তাই এখন তাদের সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা সহকারী মত্স্য কর্মকর্তা রোজিনা আকতার বলেন, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীন কুঁচিয়া আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে এলাকার কুঁচিয়া ব্যবসায় ধস নেমেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, উপজেলার বহু মত্স্যচাষীরা কুঁচিয়া চাষ করার পাশাপাশি মজাপুকুর, ডোবা-নালা ও খাল থেকে কুঁচিয়া সংগ্রহ করে আড়তে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ কারণে এখানে কুঁচিয়া চাষের একটি পাইলট প্রকল্প চালু করে সরকারের মত্স্য অধিদপ্তর। যদিও সিডরের কারণে ওই মাস্টার প্রকল্প বাতিল হয়। তার পরও কুঁচিয়া সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ ও বিক্রির মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হয়। সম্প্রতি চীনে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কুঁচিয়া রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, মজুদকৃত কুঁচিয়া দেশীয় বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হলে একটু হলেও লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন কুঁচিয়া সংগ্রহকারী জেলে ও আড়তদাররা।