টিভিএনএ রিপোর্ট: একজন উদ্যোক্তার সফলতা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের মাঝেই আসে না। লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও চিন্তাকে যদি প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের বিশালতা না থাকলেও উদ্যোক্তার উদ্যোগ সফল হয়েছে তা বলা যায়। যদি বেকার কর্মসংস্থান হয়, নৈতিকতার অবস্থান পাকাপোক্ত থাকে, নিজস্বতা বজায় রাখা যায় ও একইসাথে প্রতিষ্ঠানকে চালিয়ে নিতে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যেময়তা থাকে তাহলে সফল উদ্যোক্তার তকমা তাকে দিলে ভুল হবে।
রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারন করে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে নিত্য উপহার। টি-শার্টে বাংলার রূপকে ধারণ করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রূপসী বাংলার রূপকে টি-শার্টে গত ১৯ বছর ধরে তুলে ধরে চলেছে নিত্য উপহার। একই সাথে প্রায়াত বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, ধ্রুব এষ, সব্যসাচী হাজরা সহ খ্যাতনামা চিত্র শিল্পীদের অঙ্কন শিল্প দিয়ে সংস্কৃতমনাদের হৃদয় জয় করার চেষ্টা চালিয়েছে।
গত ১৯ বছরে শুধুমাত্র টি-শার্টেই ১২শ’র বেশি ডিজাইন করেছে এই ফ্যাশন হাউজ।
শুধুমাত্র খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীরাই না, তিনশর বেশি তরুণ ও শিশু চিত্রশিল্পী যুক্ত আছে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে। যাদের আলোকচিত্র ও অঙ্কন নিত্য উপহারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত।
বাহার রহমান, নিত্য উপহারের স্বপ্নদ্রষ্টা। যিনি চেয়েছিলেন দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারণ করে ফ্যাশন হাউজ গড়ে তুলতে। মায়ের দেয়া ১৫ হাজার টাকা ও হাতে থাকা আরও ৫ হাজার মোট ২০ হাজার টাকা দিয়ে আজিজ সুপার মার্কেটে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু নিত্য উপহারের। টি-শার্টে দেশীয় সংস্কৃতি, বরেণ্য ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও দেশের কৃষ্টি-কালচারকে তিনিই প্রথম নিয়ে আসেন।
শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের কথা বললে এখন প্রথমেই যে জিনিসটি চোখে ভাসে, তা হলো টি-শার্ট। আজিজ সুপার মার্কেট এবং টি-শার্ট যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিত্য উপহারের টি-শার্ট আজ পৌঁছে গেছে সুউচ্চ এভারেস্ট চূড়ায়। বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মূসা ইব্রাহীম যখন এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছেন তখন তার গায়ে ছিল নিত্য উপহারের টি-শার্ট।
বাহার রহমান বলেন, বাজারে প্রচলিত ডিজাইনের মতো নয়, ডিজাইনের বেসটা থাকবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে এমন স্বপ্ন নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলাম। নতুন কিছু, নিজের কিছু, মনের মতো কিছু করার চেষ্টা করেছি। যেন টি-শার্টের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে তরুণরা ধারণ করেন।
২০০৬ সাল থেকে নিত্য উপহারে যোগ হয় শাড়ি। ঋতু এবং উৎসব অনুযায়ী নিত্য উপহারের টি-শার্ট কিংবা শাড়িতে থাকে ভিন্নতা। বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস, বাবা দিবস, মা দিবস, ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবস, যেমন- স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারিতেও থাকে রঙ এবং ডিজাইনের ভিন্নতা।
বাহার রহমান বলেন, যখন একজন উদ্যোক্তার মূলধন ছোট থাকবে তখন সে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা যোগ করে তার মূলধনকে বাড়িয়ে নিতে পারে। যেমন একটি টি-শার্টে যখন রবীন্দ্রনাথের ছবি দেয়া হলো তখন তার মাত্রাটা একটু বেড়ে গেল। আবার যখন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান বা ধ্রুব এষের অঙ্কন টি-শার্টে যাচ্ছে তখন আরেকটি মাত্রা পেয়ে যায়। আসলে যদি শিল্প সংস্কৃতিতে যদি হাত পাতা যায় তাহলে সেটা বৃথা যায় না। ব্যাংক আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে কিন্তু নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতি ঐতিহ্য এর কাছে হাত পাতলে ফিরিয়ে দিবে না।