মঞ্জুরুল খোদা টরিক : জাপানে শিক্ষার আধুনিকায়নের অন্যতম প্রধান চিন্তক ফুকুযাওয়া ছিলেন ধর্মভিত্তিক ও ভাববাদী শিক্ষার ঘোর বিরোধী। তিনি জাপানকে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে যে শিক্ষাব্যবস্থার প্রস্তাব করেন, তার অন্যতম নীতি হচ্ছে যে, ব্যক্তির জন্মগত বা প্রাকৃতিক প্রতিভাকে পুরোপুরিভাবে বিকশিত হতে দিতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থা এমন হবে যাতে করে শিক্ষার্থী তাদের মৌলিক প্রতিভাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় উন্নীত করতে পারে। সে জন্য শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে, যাতে করে তাদের প্রতিভা বিকাশে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন বা শিক্ষা কার্যক্রম কোনো ক্ষতিকর বাঁধার সৃষ্টি না করতে পারে। সুতরাং প্রত্যেকটি শিশুর নিজ নিজ সত্ত্বাকে সঠিকভাবে লালন-পালন করার দায়িত্ব শিক্ষাপদ্ধতির।
ফুকুযাওয়ার এই চিন্তাই প্রকাশ পেয়েছে তৎকালীন ইউরোপীয় চিন্তাবিদদের মধ্যে। তিনি বলেছেন যে, শিশুদের মধ্যে কুসংস্কারহীন ধারণা প্রদান করতে হবে এবং পাশাপাশি তাদের অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করতে দিতে হবে। ফুকুযাওয়ার এই চিন্তাধারা বর্তমানে জাপানি শিক্ষা দর্শনে আজও একক অবস্থান করে আছে। জাপান বিদেশিদের কাছে অনেক বড় বিস্ময় ছিলো একটা প্রধান কারণে, সেটা হলো জাপানিরাই প্রথম জাতি, যে জাতি তার মৌলসত্ত্বা প্রায় অটুট ও অক্ষুন্ন রেখে পশ্চিমা সভ্যতাকে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ধারণ করেছে। পশ্চিমা ছাঁচে জাপানি সমাজকে সজ্জিত করবারকালে জাপানি মনকে গোঁড়ামি মুক্ত করার প্রচেষ্টাও হয়। যেমন স্বয়ং সম্রাট গরুর মাংস ভক্ষণ করার মাধ্যমে জাপানিদের গোঁড়ামি ত্যাগের পথ প্রদর্শন করেন।
তাদের সেই চিন্তা-ভাবনা ও কর্মের প্রতিফলন ঘটে রবীন্দ্রনাথের কথায়ও। ইউরোপ যে শক্তিতে পৃথিবীতে সর্বজয়ী হয়ে উঠেছে একমাত্র সেই শক্তি দ্বারাই তাকে ঠেকানো যায়। নইলে তার চাকার নীচে পড়তেই হবে এবং একবার পড়লে কোনোকালে আর ওঠবার উপায় থাকবে না। এই কথাটি যেমনি তার (জাপানির) মাথায় ঢুকলো অমনি সে আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না। কয়েক বৎসরর মধ্যেই ইউরোপের শক্তির আত্মসাৎ করে নিলো। ইতিহাসে এতো বড় আশ্চার্য ঘটনা আর কখনো ঘটেনি (জাপান-পারস্যে- রবীন্দ্রনাথ)।
আপনার মতামত লিখুন :