মোজাম্মেল হোসেন তোহা : লিবিয়ার তেলের টাকা কেন তুরস্কের পাঠানো সিরিয়ান মার্সেনারিদের পকেটে যাবেÑ এই অজুহাতে লিবিয়ার অয়েল ক্রিসেন্টের ‘গোত্রগুলো’ বেশ কিছু অয়েল পোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে। অফিসিয়ালি কাজটা করেছে অয়েল ক্রিসেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোত্রগুলো, যাদের নেতৃত্ব দিয়েছে মাগারবা গোত্র। কিন্তু এটা যে মূলত হাফতারের নির্দেশেই করা হয়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অয়েল ক্রিসেন্ট হাফতারের দখলে এবং সেখানে তার নির্দেশ বা গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া এ রকম মেজর উদ্যোগ নেওয়ার সাহস কারও নেই। সো যুদ্ধ শুরু হওয়ার নয় মাসের মধ্যে এই প্রথম যে এতো বড় এবং ডেঞ্জারাস ঘটনা ঘটলো, তার কারণ কী? দ্য তার্কিশ ইফেক্ট। যেটা আগেই বলেছিলাম, তুর্কির ইনভলভমেন্ট হয়তো ত্রিপোলির পতন ঠেকিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এটা লিবিয়ার যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলেছে।
অয়েল পোর্টগুলো বন্ধ করার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। লিবিয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অয়েল ফিল্ড এবং পোর্ট হাফতারের দখলে। সেগুলো অফলাইনে চলে গেলে অয়েল প্রোডাকশন দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল থেকে কমে ৩-৪ লাখ ব্যারেলে নেমে আসতে পারে। কয়েকমাস পর্যন্ত এই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার অবস্থা লিবিয়ার আছে। কিন্তু এর পরই অর্থনীতির অবস্থা আবারও খারাপ হতে শুরু করবে, বাজেট ডিফিসিট শুরু হবে, ব্ল্যাক মার্কেটে ডলারের রেট বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। গতবার যখন ফেডেরালিস্টরা অয়েল প্রোডাকশন বন্ধ করে দিয়েছিলো তখন ডলারের দাম দিনার প্রতি ১.৪০ থেকে বেড়ে ১০ পর্যন্ত পৌঁছেছিলো। ওই সমস্যা সমাধান হওয়ার পর এই মুহূর্তে ১ ডলার সামন প্রায় ৪.১০ দিনারে অবস্থান করছে। কিন্তু আশঙ্কা হচ্ছে শীঘ্রই ডলারের দাম আবারও বাড়তে শুরু করবে। অয়েল প্রোডাকশন বন্ধের ফলাফল কী হবে, বরাবরের মতোই সেটা প্রধানত নির্ভর করবে আমেরিকার উপর। এখন পর্যন্ত লিবিয়ার তেল থেকে উৎপাদিত প্রতিটা পয়সা ত্রিপোলিতেই যায়।
বিনিময়ে সম্পূর্ণ লিবিয়ার বাজেট ত্রিপোলির সরকারই চালায়। এমনকি স্বয়ং হাফতারের বেতনও তেল উৎপাদনের অর্থ থেকে ত্রিপোলি হয়ে পূর্বাঞ্চলীয় তবরুক সরকারের কাছে কাছে যায়। কিন্তু আল্টিমেটলি হাফতারের পরিকল্পনা হচ্ছে ত্রিপোলির খবরদারির বাইরে গিয়ে পৃথকভাবে পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের নামে তেল বিক্রি করা।
এখন পর্যন্ত হাফতারের বা এর আগে ফেডেরালিস্টদের এই প্রচেষ্টার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। ইন জেনারেল, আমেরিকা গ্লোবাল অয়েল সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ড রক্ষার স্বার্থে লিবিয়ার অয়েল প্রোডাকশনের উপর হাত দেওয়া পছন্দ করে না। ফেডেরালিস্টরা এর আগে যখন স্বতন্ত্রভাবে তেল বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছিলো, আমেরিকা তখন যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে সেই তেলের জাহাজ ফিরিয়ে এনে ত্রিপোলির সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছিলো। হাফতারও যখন এর আগে একবার অয়েল প্রোডাকশন বন্ধ করে দিয়েছিলো, ট্রাম্প তখন কঠোর ভাষায় একটা চিঠি দিয়ে হাফতারকে লাইনে এনেছিলো। এবার কি আমেরিকার অবস্থান ভিন্ন হবে? সৌদি-আমিরাতি লবি কি এবার আমেরিকাকে কনভিন্স করতে পেরেছে? এখনো মনে হয় না। তবে যদি কোনোভাবে হাফতারের এই প্রচেষ্টা সফল হয়েই যায় তাহলে লিবিয়া পার্টিশনের দিকেই এগোবে। আর পার্টিশনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপোলিসহ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষরাই। পশ্চিমা জনসংখ্যা বেশি, কিন্তু রিসোর্স কম। অবশ্য যদি লিবিয়া তিন ভাগ হয়, তাহলে পশ্চিমের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সাউথ। কারণ সেটা পরিণত হবে ল্যান্ডলকড কান্ট্রিতে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :