শিরোনাম
◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ নির্বাচনের মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:০২ সকাল
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধ; কাগজে কলমে কৃষক অন্তরালে চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ

বিপ্লব রায়, শাল্লা প্রতিনিধি : জেলার শাল্লা নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি ও কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের হাওরগুলো নিয়ে গঠিত হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)।

এসব পিআইসির দায়িত্বে রয়েছেন শাল্লা উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ও স্কীম প্রনয়ন কমিটি। সবকিছু যাচাই বাছাই করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অনুমোদনেই গঠিত করা হয়েছে পিআইসি।

নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের নিকটে জমি থাকা ব্যক্তিরাই প্রকল্পের সভাপতি ও সদস্য সচিব হিসেবে নির্বাচিত হবে। কিন্তু এসব কিছুর তোয়াক্কা না করেই হাওরে জমিহীন ব্যক্তিদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে।

এসব পিআইসিতে নামে সভাপতি ও সদস্য সচিব দেখানো হলেও বাস্তবে বেরিয়ে আসে অন্তরালের তথ্য। দেখা গেছে, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে কলেজের অধ্যক্ষ অন্তরাল থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কাগজে কলমে পিআইসির সদস্যদের নাম থাকলেও এসব কিছুর মুল হোতা কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ ও খালিয়াজুড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মণিভূষণ সরকার।

আর এসব করা হয়েছে শাল্লার সাবেক এসও শমসের আলী মন্টুর যোগসাজশে। জানা যায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে অকাল বন্যার কবল থেকে হাওরের ফসল নিরাপদ রাখতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ জেলায় মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-২ শাল্লা উপজেলা, খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ও ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের অধিন বিশাল ছায়ার হাওরে বেড়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

কিন্তু পিআইসি গঠন থেকে শুরু করে ওয়ার্ক-অর্ডার পর্যন্ত নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল এলাকাবাসীর। ওই সময়েই স্থানীয় কৃষকরা দাবি করে এসেছিল প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার। গণশুনানীসহ প্রকল্প এলাকার প্রকৃত সুবিধাভোগীদের নিয়ে পিআইসি গঠন রয়েছে সরকারি নীতিমালায়। আর পিআইসি গঠন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সরকারি কোনো নীতিমালাই পালিত হচ্ছে না সুনামগঞ্জের শাল্লায়।

জনশ্রুতি রয়েছে সাবেক এসও সমসের আলী মন্টু নাকি একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-২ এর অধীন খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে এবছর ৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

যার মধ্যে ৭টি পিআইসিই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম আহমেদের নিয়ন্ত্রণে বলে জানান ১২৫নং পিআইসি’র সভাপতি আবুল বাশার। আবার ১২৭নং পিআইসি’তে সভাপতি প্রদীপ চন্দ্র সরকারের নাম থাকলেও মুল কল-কাটি নাড়ছেন খালিয়াজুরী কলেজের অধ্যক্ষ মনিভূষণ সরকার। এলাকাবাসি জানান অধ্যক্ষ মনিভূষণ সরকার একজন প্রভাবশালী লোক হওয়ায় ভয়ে কিছু বলতে পারেনি স্থানীয়রা। তাই তার ভাইয়ের মাধ্যমে ইচ্ছেমতে বাঁধের কাজ করছেন। নীতিমালা অনুযায়ী কোথাও বাঁধের কাজ করা হয়নি।

এছাড়াও ওই হাওরের প্রি-ওয়ার্ক ইষ্টিমেটে রয়েছে যথেষ্ট গড়মিল। ১৩২ নং পিআইসি’র বাধের চেইনেজ ৫১.৩১৯ থেকে ৫১.৭৭২ কিলোমিটার পর্যন্ত মোট ৪৫৩ মিটার স্থান সম্পূর্ণ উচু এবং এর দক্ষিণ পাশে রয়েছে মুসলিমপাড়া, কুতুবপুর গ্রাম। যা স্থানীয় কল্যানপুর বাজারে এসে মিলিত হয়েছে এবং পাকা সড়কও রয়েছে। আবার ওই পিআইসি’র চেইনেজ ৫২.০৪০ থেকে ৫২.১৩৬ কিলোমিটার স্থানে ৯৬ মিটার বাঁধ ইষ্টিমেটে দেখানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই চেইনেজ মধ্যে মুসলিমপাড়া গ্রামের দু’পাড়ার মধ্যে একটি ৩০ফুট ব্রীজ রয়েছে। ওই গ্রামের কয়েকজন কৃষক ফিতা দিয়ে মেপে ব্রীজের নিচের ক্লোজারটি দৈর্ঘ্য ৪০মিটার দেখিয়েছেন। ৪০মিটার স্থানে ইষ্টিমেট দেখানো হয়েছে ৯৬ মিটার। যা সরকারি অর্থ লোপাটের একটি ধান্দা।

এলাকাবাসী আরো জানান, গত দু’বছরও ওইস্থানে বাঁধ করে সরকারি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট চক্র ও সাবেক এসও সমসের আলী মন্টু।

শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারী ছায়ার হাওরের ১২৫ থেকে ১৩২নং পিআইসি পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায় একটি বাঁধেও দেখা যায়নি স্ট্রাকচারাল প্রোফাইল, করা হয়নি কোনোরূপ দুরমুজ, পুরাতন বাঁধের গোড়া কাটা, পাশ থেকে মাটি মাটা, স্লোভ না দেয়া, ঘাষ বা ঢোল কলমী হয়নি লাগানো। তাছাড়া ১৩১ নং পিআইসির ৫১.০০০ থেকে ৫১.১২৫ কিলোমিটার চেইনেজে মোট ১২৫ মিটার স্থানে নেই কোনো ভাঙ্গা, যা সম্পূর্ণ উচু ভূমি ও গ্রাম সংলগ্ন। আবার ১২৫ নং পিআইসি’তে গিয়ে দেখা যায়, নেই কোনো প্রোফাইল, করা হচ্ছেনা দুরমুজ, অগোছালো মাটি গুলো গোটাকয়েক শ্রমিক কোদাল দিয়ে সমান করছেন।

স্থানীরা বলছেন, বাঁধটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই পিআইসি’র সভাপতি আবুল বাশারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কি করবো ভাই, আমরা তো নীতিমালা বুঝিনা। এগুলো বুঝেন আমাদের চেয়ারম্যান শামীম সাহেব। শামীম সাহেব বুঝেন এরূপ প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, আমাদের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে যতোগুলো বাঁধ আছে সবগুলোতই মূলত: চেয়ারম্যান শামীম সাহেবের।

অপরদিকে, ওই হাওরের ১২৭ নং পিআইসি’র সরজমিনে গিয়ে দু’দফায় ৩০/৪০জন শ্রমিককে বাঁধ ফিনিশিংয়ের কাজ করতে দেখা যায়। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পিআইসিটি নাকি নেত্রকোনা জেলার খুলিয়াজুরি কলেজের অধ্যক্ষ মনিভূষণ সরকারের। তিনিই নাকি তাদেরকে কাজে লাগিয়েছেন। উল্টোদিকে প্রকল্প এলাকায় টানানো সাইনেবোর্ড সভাপতির নাম প্রদীপ চন্দ্র সরকার পাওয়া যায়। সভাপতির মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এখন বাড়ি আছি।

আপনার কাজ কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি চুপ থেকে অল্পক্ষণ পর বলেন, আমার ভাই প্রিন্সিপাল জানেন। প্রিন্সিপালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বাঁধটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, ছোটখাটো দু’একটি ভাঙ্গা ছিল তা বাঁধলেই হতো। আপনি এমন অপ্রয়োজনীয় বাঁধটি কিভাবে পেয়েছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি হেসে বলেন বুঝেনা ভাই। বাঁধ নির্মাণে সরকারি নীতিমালা মানা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি নীতিমালা মেনে বাধের কাজ করা সম্ভব নয়। আপনার বাঁধে দুরমুজ করা হয়নি, ঘাষ বা ঢোল-কলমী লাগানো হয়নি, স্লোভের মাটিতেও দুরমুজ হয়নি এবং বাঁধের উপরিভাগের লেভেল সঠিক নয় কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এসব কাজ কারো বাঁধেই করা হচ্ছে না। আপনি ঘুরে দেখতে পারেন।

সরকারি নীতিমালা অমান্য করে নড়বড়ে বাঁধ নির্মাণ করায় বাঁধের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ এলাকার সাধারণ কৃষকগণ জানান, এবার পিআইসিরা যেসব বাঁধ করতাছে, বৃষ্টি হলেই ভেঙ্গে যাবে। আর পানি আইলে তো কথাই নাই।

এবিষয়ে সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-২ এর শাখা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাইয়ূমের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ভাই, এসব ইষ্টিমেট আমি করিনি, পূর্বে এসও সাহেব করেছেন। আর আপনি ১৩২নং পিআইসি’র যে স্থানের কথা বলেছেন তা আমাকে প্রোফাইল দেখে বলতে হবে।

এব্যাপারে শাল্লা উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন-বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল-মুক্তাদির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। সম্পাদনা : আলআমিন ভূঁইয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়