মাসুদ আলম : শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক একে এম মাইনুদ্দিন জানান, রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে উদ্ধার মা মুন্নি বেগম, দুই শিশু ফারহান উদ্দিন ও লাইভা ভূঁইয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে তাদের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। তিনটি মরদেহের উপরিভাগ বেশি পচনশীল ছিলো। মুন্নির মাথায় হাঁতুড়ির আঘাত রয়েছে। তিন মরদেহ থেকে ভিসেরা ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। রিপোর্ট হাতে পেলে পুরো ঘটনা জানা যাবে। আলামত দেখে পরিষ্কার যে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একজনই ঘটিয়েছে।
এদিকে নিহত গৃহবধূর স্বামী রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়াকে সন্দেহ করছেন পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। মুন্নী রাকিবের খালাতো বোন ছিল। প্রায় এক যুগ আগে প্রেম করে বিয়ে করেন তারা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণখানের ৮৩৮ নম্বর প্রেমবাগানের চতুর্থ তলার বাসা থেকে মা মুন্নী বেগম (৩৭) এবং তার দুই সন্তান ফারহান উদ্দিন (১২) ও লাইভা ভূঁইয়ার (৩) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মা ও মেয়ের লাশ একটি কক্ষের বিছানায় এবং ছেলের লাশ আরেক কক্ষের মেঝেতে পড়ে ছিল। মায়ের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাতুড়িও উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানান, বাসা থেকে পচা গন্ধ এলে বাড়িওয়ালার সন্দেহ হয়। এর মধ্যে রাকিব উদ্দিনের শ্যালক সোহেলও বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ওই বাসায় আসেন। বাড়িওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ তলার ডান দিকের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে তিন জনের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন তিনি। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড (বিটিসিএল) এর উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়া প্রায় ১০-১২ বছর ধরে ওই বাসায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিটিসিএল এর গুলশান কার্যালয় থেকে উত্তরা কার্যালয়ে বদলি হন। গত ৩-৪ দিন ধরেও তাকে এলাকায় দেখা যায়নি।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, ধারণা করা হচ্ছে তিন জনকেই ৩-৪ দিন আগে হত্যা করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে তিনটি লাশই ডি-কম্পোস্ট অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে মা ও ছেলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা খুনিকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছি।
নিহত মুন্নী বেগমের ভাই সোহেল আহমেদ বলেন, গত বুধবার থেকে আমরা বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। ভেবেছিলাম হয়তো কোথাও ঘুরতে গিয়েছে। শুক্রবার খোঁজ নিতে এসে লাশ পাই। আমার বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল বলেই জানতাম। আমরা এখনও বুঝতে পারছি না কারা এবং কেন তাদের হত্যা করলো। এর আগে মাস তিনেক আগে বোনের স্বামী রাকিব একবার অপহরণ হয়েছিলেন বলে বাসায় জানিয়েছিলেন, কিন্তু বিষয়টি রহস্যজনক ছিল। রাকিবের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ভাতশালা এলাকায়।
আপনার মতামত লিখুন :