ডেস্ক রিপোর্ট : প্রায় ২ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিলে হয়তো কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতেন জায়গীরদার ফয়সল (৩০)। অনেক চেষ্টা আর ত্যাগ স্বীকার করে জীবনবাজি রেখে স্বপ্নের দেশ গ্রিসের মাটি স্প'র্শ করেই নিয়তির সুতোয় টান পড়ে থেমে গেল দেহঘড়ি। তুর্কির সীমানা পেরিয়ে গ্রিসের সীমানায় প্রবেশ করেই আকস্মিক মৃ'ত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ওই যুবক।মৃ'ত্যুর ছয় দিন পর অনেক চেষ্টা করে বুধবার গ্রিসের সীমানার কাছাকাছি পাহাড়ী এলাকায় বরফের তল থেকে তার ম'রদেহ উ'দ্ধার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন গ্রিসে বাংলাদেশের হাইকমিশনার জসীম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ম'রদেহ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। জায়গীরদার ফয়সল সিলেটের বালাগঞ্জ উপজে'লার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজা'পুর গ্রামের মহুদ আহম'দ জায়গীরদারের দ্বিতীয় ছে'লে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফয়সলের সফরসঙ্গী ফয়সলের বাড়িতে মৃ'ত্যুর সংবাদটি জানিয়ে মৃ'তদেহের ছবি পাঠান। ছবিতে দেখা যাচ্ছে– একটি গাছের নিচে বরফ ও গাছের ডালের ওপর মৃ'তদেহটি পড়ে রয়েছে। গাছের ডালে কালো রঙের একজোড়া হাত মোজা ঝুলানো রয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফয়সল এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও তার লেখাপড়া আর এগোয়নি।
স্থানীয় বোয়ালজুড় বাজারে ছোটখাটো একটা ব্যবসা পরিচালনা করতেন তিনি। বেশ কয়েক বছর আগে ভিসা নিয়ে ওমান যান। তার বড় ভাই আলীমুল হাসানও সেখানে থাকেন। ওমান থাকাবস্থায় কয়েকবার দেশে আসা-যাওয়া করেছেন।
মাস ছয়েক আগে তিনি ওমান থেকে ইরাক হয়ে তুর্কি যান। সেখানে তিনি ভালোই ছিলেন, নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফোন করে তার জন্য দোয়া করার কথা বললেও গ্রিসে যাওয়ার বিষয়টি জানাননি।
গ্রিসে যাত্রা পথে ফয়সলের সঙ্গী স্থানীয় এক যুবকের বরাত দিয়ে ছোট ভাই রুজে'ল আহম'দ জানান, দালালের প্ররোচণায় ফয়সলসহ কয়েকজন তুর্কি থেকে গ্রিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দালাল তাদের সঙ্গে চুক্তি করে কয়েকবার চেষ্টা করেও গ্রিসে পৌঁছাতে পারেননি। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি ফয়সলসহ কয়েকজন গ্রিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
জঙ্গল এলাকা পাড়ি দিয়ে তুর্কি থেকে গ্রিসের সীমানায় প্রবেশের পর ৭ ফেব্রুয়ারি ভোরের দিকে গাড়িতে প্রায় আধাঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে একটি নির্জন স্থানে ফয়সলসহ তার সঙ্গে থাকা পাঁচজনকে নামিয়ে দেয়া হয়।
সেখানে অ'পেক্ষমাণ অবস্থায় গ্রিসের সময় আনুমানিক বেলা ২টার দিকে ফয়সল আকস্মিকভাবে অ'জ্ঞান হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে কিছু খেতে চান, কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো খাবার বা পানিও ছিল না। এর পরই মৃ'ত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
সঙ্গীরা মুঠোফোনে ফয়সলের মৃ'তদেহের ছবি এবং ওই স্থানটির ছবি তুলেন। এ সময় দালালের লোকজন সেখানে গিয়ে ফয়সলের ম'রদেহ ফেলে রেখে তার সঙ্গীদের ভ'য় দেখিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এর পর থেকে গ্রিসের ওই দালালের সঙ্গে কেউই যোগাযোগ করতে পারছেন না।
৮ ফেব্রুয়ারি ফয়সলের সফরসঙ্গী ওই যুবক ফয়সলের বাড়িতে মৃ'ত্যুর সংবাদটি জানিয়ে মৃ'তদেহের ছবি পাঠান। ছবিতে দেখা যাচ্ছে- একটি গাছের নিচে বরফ ও গাছের ডালের ওপর মৃ'তদেহটি পড়ে রয়েছে। গাছের ডালে কালো রঙের একজোড়া হাত মোজা ঝুলানো রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই স্থানটি চিহ্নিত রাখতে সঙ্গীরা ফয়সলের হাত মোজা গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে গেছেন।
ফয়সালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফয়সলের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। ছে'লের শোকে তার অ'সুস্থ বাবা ও মা খেলা বেগম চৌধুরী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শেষবারের মতো তারা ছে'লের ম'রদেহটি এক নজর দেখার আকুতি জানিয়েছেন।
নির্বাক ভাইবোনসহ বাড়ির লোকজন হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনরা বাড়িতে জড়ো হয়েছেন, তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :