মো. বশিরুল ইসলাম : আমাদের দেশে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ- এ রকম অনেক পেশাজীবী রয়েছে। এ পেশাজীবীরা দেশের উন্নয়ন, কৃষি, যোগাযোগ, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, জনকল্যাণ, প্রশাসন খাতে কাজ করে থাকে। যার সুফল সাধারণ জনগণ ভোগ করে। আমরা জানি, ডাক্তারি অনেক বড় মাপের মহৎ পেশা। সামান্য মাথাব্যথা থেকে শুরু করে যেকোনো অসুখ-বিসুখে আমরা ডাক্তারের কাছে ছুটে যাই। ডাক্তারের মুখের কথার ওপর ভরসা করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি। ডাক্তাররা সমাজের সেবক, মানুষের সেবক। অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলেন। তেমনি ভেটেরিনারি চিকিৎসকও অসুস্থ পশুকে সুস্থ করে তোলেন। একজন কৃষিবিজ্ঞানী কৃষির উৎকর্ষের জন্য গবেষণা করেন, গবেষণা করে উদ্ভাবিত করেন নতুন প্রযুক্তি, আর সে প্রযুক্তি মাঠে সম্প্রসারণও করেন কৃষিবিদরা।
বিগত দিনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বেশকিছু সাফল্য রয়েছে। প্রসূতি ও নবজাতকের উন্নত চিকিৎসা প্রদান এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারের ফলে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া ভিটামিনের সঠিক প্রয়োগে প্রসূতি ও নবজাতকের ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ উল্লেখযোগ্য হারে নেমে এসেছে। এখন প্রতি বছর ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট তারিখে শিশুদের হেপাটাইটিস-বি, হাম, কৃমি, পোলিওসহ নানা রোগের প্রতিষেধক ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু চিকিৎসা পেশার সাথে সংশ্লিষ্টদের গবেষণা, আবিষ্কার আমাদের দেশে খুবই নগণ্য।
আমাদের সমাজের একেবারে উচ্চশ্রেণির পেশাগুলোর মধ্যে একটি হল প্রকৌশলী পেশা। এই পেশার যেমনটা সম্মান রয়েে তেমন রয়েছে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা। এই পেশার মানুষজন একটি সমাজের নির্মাতা হিসেবে কাজ করে। আর এই কারণেই এই পেশাটি অনেক বেশি জনপ্রিয়। জনপ্রিয় হলেও এ পেশাজীবীদের আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য গবেষণা হাতে গোনা। আমরা যদি অন্যান্য পেশার সঙ্গে কৃষি পেশাকে তুলনা করি তাহলে দেখব কৃষিবিদদের গবেষনা সরাসরি দেশ উন্নয়নে কাজ করছে বলে আমি মনে প্রাণে বিশ^াস করি। আমি কেন আজ সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে-বর্তমান সময় এ দেশের উন্নতির জন্য বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত কৃষিবিদরাই বেশি অবদান রেখেছে এবং রেখে চলছে। কৃষিবিদদের হাতেই সৃষ্টি হচ্ছে ফসলের নতুন জাত কিংবা ফসলের উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি। শুধু ফসল কেন, ফসলের পাশাপাশি গবাদিপশুর উন্নয়ন, দুধের মান ও পরিমাণ বাড়ানো, মাংসের জন্য উন্নত জাতের পশুপালন প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরনের মাছের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি খামারের বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিকীকরণ কিংবা কৃষির সব ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণÑ এসবই কৃষিবিদদের হাতের স্পর্শে প্রাণ পায়। উজ্জীবিত হয় সংশ্লিষ্ট সবাই। এভাবেই ঘুরে দাঁড়ায় এ দেশের মেরুদন্ডখ্যাত কৃষকের অর্থনৈতিক অবকাঠামো। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুবাদে কৃষিবিদগণ এদেশে আজ এক মর্যাদাবান পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃত। কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষণা ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে দেশ আজ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির বিভিন্ন সূচকে বিশ্বের জন্য পথিকৃৎ।
দেশের অঞ্চলভিত্তিক আরও নতুন জাত উদ্ভাবন, কৃষককে ফসলি উৎপাদণে আগ্রহীকরণ, অঞ্চলভিত্তিক কৃষি সেবা প্রদান, বিভিন্ন কৃষি সংস্থার যথাযথ সহযোগিতা এবং কৃষিবিদদের নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষিতে আরো উন্নয়ন সম্ভব। এছাড়া কৃষি ইপিজেড ও কৃষির যান্ত্রিকীকরণই হবে আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের হাতিয়ার যার ফলে সকল কৃষি সেবা পৌঁছে যাবে কৃষকের দৌরগোড়ায়। আশা করি বর্তমান সরকারের ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে এই দেশের সর্বত্র বিশেষ করে উপকূলীয় কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে এবং ফসল উৎপাদণ বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুণ হারে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশে বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো দেড় কোটি মেট্রিকটন। অথচ বর্তমানে বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি মেট্রিকটনের বেশি। আর এই উৎপাদন চার কোটি মেট্রিকটনে পৌঁছাতে চলছে নানা পরিকল্পনা। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত নানা কারণে দেশের কৃষিজমি কমেছে অর্ধেকের বেশি। তারপরেও কৃষিতে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে সাধারণ কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের নিরলস গবেষণার ফলে। কৃষিবিদরা নিজেদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্যই নিজ নিজ দায়িত্বে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকুক, এগিয়ে যাক আমাদের কৃষি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বাংলাদেশ খাদ্যশস্য রপ্তানীকারক দেশ-এ পরিণত হোক-কৃষিবিদ দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, [email protected]
আপনার মতামত লিখুন :