কামাল হোসেন, গোয়ালন্দ প্রতিনিধি: পায়ে শিকল। ছোট্র ছাপড়া ঘর। চার পাশে ভাঙ্গা বেড়া। মেঝেতে সেঁতসেঁতে মাটি। ঘরের মধ্যে ছোট একটি চৌকি। চৌকির উপর বসে রয়েছে জিয়া। দেখলে মনে হবে সুস্থ্য সবল একজন মানুষ। কেউ সামনে গেলে সিগারেট ও বিড়ি চায়।
পেলে মনের আনন্দে টানে। প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন। নিজের নাম, কি করতেন স্পষ্ট বলতে পারেন। তবে এর বাইরে যা বলেন সবি এলোমেলো। ১০ গজের মধ্যে জিয়ার বসবাস। এই ১০ গজের মধ্যেই গোসল, টয়লেট এবং খাওয়া-দাওয়া। মূল বাড়ি’র মধ্যে নয়। বাড়ি’র পিছনে পরিত্তাক্ত একটি ঘরের মধ্যে দুই যুগ শিকল পায়ে বন্দী জীবন পার করছেন জিয়া।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের কছিমদ্দিন পাড়ার কাদের সরদারের মেঝো ছেলে জিয়া। ৫ভাইয়ের মধ্যে মেঝো। অন্যান্য ভাইগুলোর মত তিনিও রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। হঠাৎ দুই যুগ আগে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। আশপাশের মানুষের ক্ষতি করেন। বাড়ি’র জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলেন। এমন পাগলামির জন্য পাবনায় নিয়ে চিকিৎসা করা হয়। ভালো হয়ে ফিরে আসেন। শুরু করেন কাজ। কিন্ত পুনরায় আবার পাগলামী। টাকার অভাবে পরবর্তিতে আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। যার কারনে শিকল পায়ে বন্দী করে রাখা হয় তাকে। ছেলের এমন করুন অবস্থা দেখে মা লায়লী বেগমও দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ্য।
জিয়ার চার ভাই বিয়ে করে সংসার করছে যার যার মতো। জিয়া থাকেন ছোট ভায়ের সংসারে । ছোট ভাই আকমাল ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তাকে দেখাশুনা করেন। শারমিন আক্তার বলেন, আজ প্রায় ২০/২১ বছর হলো আমি আমার ভাসুরকে দেখা শুনা করি আমার বিয়ের অনেক আগে থেকেই তিনি অসুস্থ্য। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।
জিয়ার বাবা কাদের সরদার বলেন, আমার বয়স হয়েছে। কাজ করতে পারি না। অন্য ছেলেরা দিন আনে দিন খায়, এমন অবস্থায় অর্থের অভাবে আমার মেঝো ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকার ও সমাজের বিত্তবানেরা যদি সহযোগিতা করতো তাহলে, আমার অসুস্থ্য ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারতাম। চিকিৎসা করালে আমার ছেলে ভালো হয়ে, আবারও কাজ কর্ম করতে পারতো। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :