কামরুল হাসান মামুন : পারভেজ হুডভয় পাকিস্তানের সেরা তত্ত্বীয় পদার্থবিদদের মধ্যে একজন। তার বিশেষত্ব হলো তিনি কেবল একজন ভালো পদার্থবিদই নন একইসঙ্গে তিনি পাকিস্তানের মানুষের বাকস্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শিক্ষা নিয়ে কলমের লড়াই গোটা ক্যারিয়ারজুড়ে জারি রাখা একজন কলমযোদ্ধা। ১ ফেব্রুয়ারি তিনি পাকিস্তানের বিখ্যাত ‘Dawn’ পত্রিকায় একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন যার শিরোনাম হলো Why Pakistan loses its best। শিরোনামটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। আমি সেই লেখাটি ফেসবুক ও টুইটারে দেখে আজ কয়েকদিন যাবৎ পড়ছি আর ভাবছি এই দু’দেশের মাঝে কী মিল? পার্থক্য হলো পাকিস্তানে অন্তত পারভেজ হুডভয়ের মতো একজন আছেন যিনি টের পেয়েছেন এবং মানুষকে জানিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের এখানে এটা আরও বড় আকারে ঘটছে, কিন্তু কেউ টের পাচ্ছেন না।
সেই আর্টিকেলটি লিখেছেন আমির ইকবাল নামে এক তত্ত্বীয় পদার্থবিদ প্লাস গণিতবিদকে নিয়ে। যিনি এমআইটি থেকে পিএইচডি করে নোবেল পুরস্কার পাওয়া পৃথিবীর সেরা পদার্থবিদদের সঙ্গে গবেষণা করে অনেক ভালো গবেষক হয়ে নিজ দেশে ফিরে এসেছিলেন। প্রথমে যেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সেখানে পাঁচ বছরের বেশি টিকতে পারেননি। তারপর আব্দুস সালাম স্কুল অফ থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে চাকরি নেন, কিন্তু তাকে পার্মানেন্ট পজিশন দেয়নি। ফলে প্রতি বছর তাকে তার চাকরি রিনিউ করতে হতো যেন প্রশাসনের কৃপা প্রার্থনা করেন। সেখানে বড় আর্থিক দুর্নীতি দেখে সেটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেখান থেকেও চাকরি হারান এবং শেষমেশ দেশ ছেড়ে আবার আমেরিকায় পাড়ি জমান। তার এই আমেরিকায় চলে যাওয়াতে পারভেজ হুডভয় কষ্ট পেয়েছেন এবং প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। আমিও দেখছি বাংলাদেশের অনেক ছেলেয়েমে এখন বিদেশে পিএইচডি পোস্ট-ডক করে দেশে আসার চিন্তাও করেন না। যেই কয়েকজন আসছে এবং আমি যাদের চিনি তারা এখন regret করেন যে কেন এসেছে। এখন তারা চলে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যেই চলে গেছেন, কিন্তু আমাদের প্রশাসন টেরই পায়নি। অথবা আমি নিশ্চিত বরং আপদ যাচ্ছে ভেবে খুশিই হয়েছেন। কেউ কেউ পাবলিক থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার পথ খুঁজছে। এখন যারা বিদেশ থেকে পিএইচডি পোস্ট-ডক করে আসছে তারা অপমানিত হওয়ার আশঙ্কায় আর পাবলিকে দরখাস্তই করে না।
তিনি তার আর্টিকেলে লিখেছেন পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন রাজনীতির ... দিয়ে ভরে এখন এগুলো একেকটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন এমন অবস্থায় এসেছে যেখানে বিকৃত মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ কর্তৃক নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালা তৈরি হয়েছে। যে সব নিয়োগ বোর্ডে duffer বা অকর্মণ্য লোক, যারা একাডেমিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, দিয়ে পূর্ণ। আজ এ সব অকর্মণ্য ও ব্যর্থ শিক্ষকদেরই জয়জয়কার। আমি ভাবছি তাদের সঙ্গে আমাদের কতো মিল। সম্প্রতি দেখলাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল। রিপোর্ট পড়ে স্পষ্ট বোঝা গেছে যে এই ভিসির অন্যায়, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। তারপরও কোনো বিচার হবে না।
অন্যায় করবে না কেন? সরকার তাকে তার কর্মের রিওয়ার্ড হিসেবে ভিসি বানিয়েছেন। তার কী যেন একটি ইলেকশন মনিটরিং এনজিও আছে সেটার মাধ্যমে গত পার্লামেন্ট নির্বাচনকে নিরঙ্কুশ নির্লজ্জ বৈধতা দিয়েছেন। তাই তার ধারণা তিনি এখন যাই করুন পার পেয়ে যাবেন। তাহলে সরকার কী দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার কথা ভেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছে? শুধুই কী বেগম রোকেয়ার ভিসি? বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একজন ভিসি দেখান তো যার একাডেমিক যোগ্যতা, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাদ দেন, দেশের সেরা পাঁচটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে তুলনা করে দেখুন তো। প্রায় কোনো ভিসির একাডেমিক যোগ্যতা কোনো গুগল স্কলার কিংবা রিসার্চগেটে পাবেন না আর দুয়েকজনকে পেলেও ওসব থাকার চেয়ে না থাকা সম্মানের। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :