তিমির চক্রবর্ত্তী: বাংলাদেশে ধূমপানে প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ অপচয় হয় তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪ শতাংশ। ধূমপান ও তামাক সেবনের ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউএস ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের ২০১৭ সালের এক যৌথ সমীক্ষা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ অংশের এ হিসাব পাওয়া গেছে। সূত্র: যুগান্তর
ওই সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বে ১৩টি দেশে সবচেয়ে বেশি সিগারেট-বিড়ি, জর্দা, গুল ও সাদাপাতার মতো ক্ষতিকর তামাক পণ্য উৎপাদিত হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে শীর্ষস্থানীয়। সে হিসাবে ধূমপানসহ তামাক জাতীয় পণ্যের পেছনে বিশ্বে মোট ব্যয়ের এক শতাংশও (১ ডলার ৮০ টাকা হিসাবে) যদি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ধরা হয়, তাহলে বাংলাদেশে বছরে ব্যয় হয় প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। ধূমপানের পেছনে পোড়ানো এই বিপুল পরিমাণ অর্থ রক্ষা করা গেলে প্রতি বছর দেশে অন্তত তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হতো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, আয়ের দিক থেকে ধূমপায়ীদের সংখ্যাগরিষ্ঠই অসচ্ছল। ফলে ধূমপায়ীর পরিবারের সদস্যরা পরিমিত পুষ্টির জোগান ও শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের ভারসাম্য রাখতে পারছেন না। এটা সুস্থ, টেকসই ও মেধাভিত্তিক জাতি গঠনের পথে বিরাট অন্তরায়। ফসলি জমিতে তামাক চাষ হওয়ায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে। এটি দেশের অর্থনীতির অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকেও ব্যাহত করছে।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০০৯-এর গবেষণা তথ্যে বলা হয়, দেশে ধূমপায়ীর বর্তমান সংখ্যা ২ কোটি ২৯ লাখ এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী ২ কোটি ৫৯ লাখ।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ধূমপান এখন বিদ্যালয়গামী শিশু-কিশোরদেরও গ্রাস করছে। গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে (জিওয়াইটিএস) ২০১৩-এর জরিপ বলছে, ১৩-১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬.৯ শতাংশ ধূমপানে আসক্ত। এর মধ্যে ছেলে ৯.২ ভাগ ও মেয়ে ২.৮ ভাগ। বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করায় কিছুটা কমলেও এর হার একবোরেই নগণ্য। আইন থাকলেও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, তামাক খাত থেকে সরকার বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব পাচ্ছে। তবে সরকারকে রাজস্ব আয় থেকে পিছু হটে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।