শাহীন চৌধুরী: দেশের প্রথম এবং একমাত্র কয়লা খনি এখনো উৎপাদনে থাকলেও তার ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে এই খনি নির্ভর ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখার জন্য উত্তরাঞ্চলে ফুলবাড়ি ক্ষেত্র কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা জটিলতায় তা সম্ভবপর হয়নি।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার এই কয়লা খনি ২০০৫ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়লা উৎপাদন করছে। খনিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার মালিকানায় পরিচালিত হলেও এর কারিগরি ব্যবস্থাপনা, তদারকি পুরোটাই বিদেশি ঠিকাদার ও পরামর্শক নির্ভর। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বড়পুকুরিয়া খনির প্রতিটন কয়লার উৎপাদনমূল্য অনেক বেশি।
প্রসঙ্গত, বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্র ১৯৮৫ সালে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) আবিষ্কার করে। এই কয়লা ক্ষেত্রে ৬৬৮ হেক্টর (১, ৪৯৬.২৪ একর) এলাকায় কয়লার মজুদ নিরূপণ করা হয় ৩৯০ মিলিয়ন টন। পরবর্তীতে সেখানে ১৯৯৪ সালে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যে ভূগর্ভস্থ খনি নির্মাণের চুক্তি করে পেট্রোবাংলা।
সূত্রমতে, অপেক্ষাকৃত কম গভীরতায় ২৭১ হেক্টর জায়গাজুড়ে মজুদ ১১৮ মিলিয়ন টন। কয়লা ক্ষেত্রের দক্ষিণের অপেক্ষাকৃত গভীর (৮১ দশমিক ১ হেক্টর জায়গাজুড়ে ৩৭ মিলিয়ন টন মজুদ অংশ বাদ রেখে, মধ্যবর্তী ৩০০ হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত ২৩৫ মিলিয়ন টন মজুদ এলাকায় কয়লা উত্তোলনের জন্য ভূগর্ভে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, খনি থেকে ২০০১ সাল থেকে শুরু করে প্রতি বছর এক মিলিয়ন টন হারে কয়লা উত্তোলন করা হবে এবং ৬৪ বছর ধরে কয়লা উত্তোলন অব্যাহত থাকবে। কার্যত কয়লা উত্তোলন শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে। একই বছর বড়পুকুরিয়ায় ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শেষ করা হয়। পার্শবর্তী কয়লা খনির উৎপাদন থেকে ৬৫% কয়লা ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার কথা। ২০১৮ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহ নির্ভর আরও ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিট চালু করা হয়।
বড়পুকুরিয়ায় ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার তৃতীয় ইউনিট চালু করার পর প্রধানত সেটিই চালানো হচ্ছে। আর আগে নির্মিত ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট কখনোই পুরো ক্ষমতায় চলেনি। যদি কখনো বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তার সম্পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো হয়, তাহলে দৈনিক বড়পুকুরিয়া খনির উৎপাদিত মানের ৫ হাজার ২০০ টন টন কয়লার সরবরাহ প্রয়োজন হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উৎপাদন এবং অব্যাহত সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ থাকায় যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবার আমদানি করা কয়লা দিয়েও এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন চালু রাখা লাভজনক হবে না। তাদের মতে, এ ব্যপারে এখনই বিকল্প ভাবা উচিৎ।
আপনার মতামত লিখুন :