শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:১৩ দুপুর
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:১৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রাণীর প্রতি রাসূলের (সা:) ভালোবাসা

মাজহারুল ইসলাম : শুধু মানুষ নয়, সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতি রাসূলের (সা:) ভালোবাসা ছিলো সীমাহীন। কারণ তিনি রহমাতুল্লিল আলামীন। পশু-পাখি ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা রাখা এবং অধিকার রক্ষা করা রাসূলের (সা:) শিক্ষা। মহানবী মানুষকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন পশুপাখি, তরুলতা ও প্রকৃতি। কেবল মানবজাতি নয়, জীবজন্তুর অধিকার রক্ষায়ও তিনি ছিলেন সোচ্চার। মহান আল্লাহ বলেন, আমি আপনাকে (রাসূল সা:) বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। নয়াদিগন্ত

জাহেলিয়াতের যুগে পশুপাখির সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হতো। জীবজন্তুদের নিশানা বানিয়ে হত্যা করা হতো। ঠিকমতো খাবার দেয়া হতো না। সুস্থতার প্রতি ভ্রƒক্ষেপ করতো না। জন্তুর ওপর অতিমাত্রায় বোঝা চাপিয়ে দিতো। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামের সুযোগ দেয়া হতো না। নির্মম শাস্তি দিতো এবং যেভাবে যত্রতত্র ব্যবহার করতো। রাসূল (সা:) এসব জঘন্যতম প্রথা দূর করেন। তিনি জীবজন্তু ও পশুপাখির দুঃখে ব্যথিত হতেন। তাদের কষ্টে বিচলিত হতেন।

এক দিন রাসূলুল্লাহ (সা:) এক আনসারির খেজুর বাগানে প্রবেশ করলে হঠাৎ একটি উট দৃষ্টিগোচর হয়। উটটি নবীকে (সা:) দেখে কাঁদতে লাগলো। এতে নবীজী ব্যথিত হলেন। উটটির কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। উটটির কান্না বন্ধ হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ উটের মালিক কে। এক আনসারি যুবক এসে বলল, আমার, হে আল্লাহর রাসূল (সা:)। নবীজী (সা:) বললেন, আল্লাহ যে তোমাকে এই নিরীহ প্রাণীটির মালিক বানালেন, এর ব্যাপারে তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না। উটটি আমার কাছে অভিযোগ করেছে, তুমি একে ক্ষুধার্ত রাখো এবং কষ্ট দাও (সুনানে আবু দাউদ : ২৫৪৯)।
একবার রাসূলুল্লাহ (সা:) একটি উটের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, প্রচুর ক্ষুধার তাড়নায় যার পিঠ পেটের সঙ্গে লেগে গেছে। এ দৃশ্য দেখে নবীজীর ভীষণ মায়া হলো। সাহাবিদের ডেকে বললেন, বাকশক্তিহীন প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। সুস্থ অবস্থায় এগুলোতে আরোহণ করো, সুস্থ অবস্থায় আহার কর (আবু দাউদ : ২৫৪৮)।

পশুপাখির অধিকার রক্ষায় নবীজীর ভূমিকা
নবীজী মানুষের দুঃখ দূর করার জন্য যেমন পদক্ষেপ নিতেন, তেমনি জীবজন্তু পশুপাখির প্রতিও দয়া প্রদর্শন করতেন। তাই তিনি সর্বদা তাদের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রাণীদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে বলেন : ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তায়ালা কোমল হৃদয়বান, তিনি কোমলতা পছন্দ করেন, তিনি এতে আনন্দিত হন এবং সাহায্য করেনÑ যা কঠোরতার সময় করেন না। যখন তোমরা এসব বাকশক্তিহীন সওয়ারির ওপর আরোহণ করো, তখন তাকে সাধারণ মঞ্জিলে নামাও (অর্থাৎ স্বাভাবিক দূরত্বের অধিক চালিয়ে অধিক কষ্ট দিও না)। যেখানে বিশ্রাম করবে, সেখানকার জায়গা যদি অনুর্বর হয় এবং ঘাস না থাকে তবে শিগগিরই সেখান থেকে একে বের করে নিয়ে যাও নতুবা এর হাড় শুকিয়ে যাবে (অর্থাৎ ঘাসপাতাহীন জায়গায় বিলম্ব করলে উহারা না খেয়ে শুকিয়ে যাবে। ফলে হাঁটতে পারবে না)। আর তোমাদের জন্য রাতে ভ্রমণ করাই উচিত। কারণ রাতে যেই পরিমাণ পথ অতিক্রম করা যায় দিনে তা হয় না। রাতে যদি কোনো স্থানে অবস্থান করো, তবে পথে অবস্থান করো না। কেননা সেখানে জীবজন্তু চলাফেরা করে এবং সাপ বাস করে (মুয়াত্তা ইমাম মালিক: ১৭৬৭)।

প্রাণীদেরকে অযথা কষ্ট দেয়া পাপ
পশু-পাখির প্রতি নম্রতা প্রদর্শন ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত। পশু-পাখিকে কষ্ট দেয়া গুনাহের কাজ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘‘আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের ওপর ‘ইহসান’ অত্যাবশ্যক করেছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে, দয়ার্দ্রতার সঙ্গে হত্যা করবে। আর যখন জবেহ করবে, তখন দয়ার সঙ্গে জবেহ করবে। তোমাদের সবাই যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং তার জবেহকৃত জন্তুকে কষ্টে না ফেলে (সহিহ মুসলিম : ১৯৫৫)। পশু-পাখির সাথে যথাসম্ভব দয়াশীল আচরণ করতে হবে। এদের সঙ্গে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না। পশু-পাখির অঙ্গহানি করা নিষিদ্ধ।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে প্রাণীদের অঙ্গচ্ছেদ করে (বুখারি, হাদিস নং : ৫৫১৫)।
আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রাণীর মুখে আঘাত করতে এবং মুখে সেঁক লাগাতে বারণ করেছেন (সহিহ মুসলিম : ২১১৬)।

প্রাণীকে কষ্ট দেয়ার পরিণতি
যে কোনো প্রাণীকে ভালোবাসতে হবে। অযথা কষ্ট দিলে অবশ্যই এর শাস্তি ভোগ করতে হবে। রাসূল সা: বলেন : ‘যে ব্যক্তি কোনো চড়ুইকে অযথা হত্যা করল, তা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার নিকট উঁচু স্বরে ফরিয়াদ করে বলবে : ইয়া আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে হত্যা অযথা করেছিল, সে কোনো লাভের জন্য আমাকে হত্যা করেনি’ (নাসায়ি : ৪৪৪৬)।
বিড়ালকে কষ্ট দেয়ার কারণে এক মহিলাকে জাহান্নামে যেতে হয়েছিল। রাসূল সা: বলেন : ‘এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ওই কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খানাপিনা কিছুই করায়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত’ (সহিহ বুখারি : ৩৪৮২)।

প্রাণীর প্রতি মমতার পুরস্কার
রাসূল (সা:) প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে এক মহিলার জাহান্নামে যাওয়ার কথা যেমন বর্ণনা করেছেন, তেমনিভাবে এদের প্রতি সহনশীলতা ও মমতা প্রদর্শন করে একজন ব্যক্তির জান্নাতে যাওয়ার ঘটনাও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে এক ব্যক্তির ভীষণ পিপাসা লাগে। সে ক‚পে নেমে পানি পান করলো। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেলো, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবলো, কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে ক‚পের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করালো। আল্লাহ তায়ালা তার আমল কবুল করেন এবং তার গোনাহ মাফ করে দেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সওয়াব হবে। রাসূল (সা:) বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেও পুণ্য রয়েছে (সহিহ বুখারি : ২৩৬৩)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়