কামরুল হাসান মামুন : আমার নানাবাড়ি পটুয়াখালী। বাড়িটি ছিলো নদীর খুব কাছে। ছোটবেলায় প্রতি ডিসেম্বর মাসে স্কুলের বাৎসরিক পরীক্ষার পর বেড়াতে যেতাম। তখন দেখতাম নদীর জোয়ার-ভাটা কেমন। জোয়ারের সময় দেখতে খুবই সুন্দর। কিন্তু যখন ভাটা আসতো তখন নদীর পাড়ের দিকে তাকালে খুব কুৎসিত লাগতো। ময়লা-আবর্জনা, মরা মাছ ইত্যাদি নানা কিছু পড়ে থাকতো। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে নদীর ভাটার কথা স্মরণ হয়ে যায়। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে আবাসিক হলের দিকে তাকালে কেবল ভাটার কথাই মনে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত অমর হয়। সময়ে এর জৌলুস সুনাম কেবল বাড়তেই থাকে। কিন্তু আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছরের মাঝেই ভাটা এসে গেছে। যেখানে তাকাই সেখানেই কেমন জানি ক্ষয়ে যাওয়া, নুইয়ে যাওয়া দেখি। এতো তাড়াতাড়ি ভাটা আসবে তা কল্পনাতীত। অথচ এর জন্মের সময়টা ছিলো কতো গৌরবময়। কতো ভালো ভালো স্কলার ছিলো।
কয়েকদিন আগে কয়েকজন ছাত্রী মিলে একটি ভিডিও গান গেয়ে সেটি ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে। এটি আমার নজরেও আসে এবং অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে কয়েকবার দেখলাম। এটি স্কুল কিংবা কলেজের ছাত্রীরা করলেও মানা যেতো। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রী এ রকম শব্দচয়নে এ রকম অভিব্যক্তিতে একটি গান গেয়ে সেটি আবার ইন্টারনেটে দিয়ে দেবে ভাবা যায় না। তাদের দিকে তাকালে মনে হয় মনমরা। প্রাণ নেই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা থাকবে উচ্ছলতায় উজ্জীবিত। কোনো হলের ছেলেরা প্রেম করবে, কিন্তু বিয়ে করবে না এ সব বলা কী মানায়? এমনিতেই এ দেশের ছেলেরা পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়ে বড় হয়ে মেয়েদের শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিতে দুর্বল ভাবে। মেয়েদের গানের এই শব্দগুলো ছেলেদের সেই ভাবনাকে আরও উসকে দেবে।
এই মেয়েরাই যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে আজকে যদি পশ্চিমা দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো? এ রকম করতো অসম্ভব, কল্পনাতীত। এই একই মেয়ে আচরণ, শিক্ষা, দীক্ষা সর্বদিক দিয়ে ভিন্ন রকম মানুষ হতো। এতে প্রমাণিত হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। দোষ আমাদের। দেশ যারা চালায় তারা এবং আমরা শিক্ষকরা ও সাধারণ অভিভাবক সবাই এর জন্য দায়ী। কারণ শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে ভিসি নিয়োগ কোনো কিছুই ঠিক নেই। আমাদের সরকার যদি এই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতো তাহলে এ সব নিয়োগের ব্যাপারে তাদের রাজনীতি ইঞ্জেক্ট করতো না। যেই পরিমাণ বরাদ্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয় বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের একটি বিভাগের বরাদ্দও গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দের চেয়ে বেশি। এই হলো হাল। আমাদের সরকার এতোই কেয়ার করে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :