মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী : ১৯৬৬ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে উত্তাল জনসমূদ্রে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, আমরা বির্ট্রেিশর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে পাকিস্তান করেছি।
কিন্তু পাকিস্তানিরা আমাদের প্রতি ন্যায় বিচার না করে আমাদেরকে শাসনের নামে শোষণ করছে। পাকিস্তানের জিন্নাহর নেতৃত্বে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো, যার কারণে আমাদের ভাষার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বাঙ্গালীদের নরকঙ্কাল দেহের উপর পাকিস্তানি পাঞ্জাবীদের লাল টয়েটা গাড়ি চলবে, এটা পৃথিবীর সবাই মেনে নিলেও আমি মুজিবুর রহমান কখনোই মেনে নিবো না।
শেখ মুজিবুর রহমানের এ বক্তব্য স্মৃতিচারণ করে তুলে ধরেন সে দিনের প্রত্যক্ষদর্শী ৬ দফার মোহাম্মদ উল্যাহ ও বঙ্গবন্ধুর কালো-মানিক খ্যাত তৎকালীন নোয়াখালীর চৌমুহনী শহর ছাত্রলীগের সেক্রেটারী, বর্তমান প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ভিপি মোহাম্মদ উল্যাহ।
১৯৬৬ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ দীঘিরপাড়ে শেখ মুজিবুর রহমান জনসভা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন নোয়াখালী জেলা আ. লীগের সভাপতি আবদুল মালেক উকিল এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক।
এই জনসভায় তখনকার প্রতক্ষ্যদর্শী ভিপি মোহাম্মদ উল্যাহ, ছাত্রনেতা মমিন উল্যা, লোকমান গাজী ও জয়নাল আবেদীনের ¯েøাগানে ৬দফার পক্ষে উত্তাল হয়ে উঠে জনসভায় উপস্থিত দেড় লক্ষাধিক মানুষ। শেখ মুজিবুর রহমান ৬দফার পক্ষে জনমত চাইতেই উত্তাল জনসমূদ্র থেকে আওয়াজ আসতে থাকে “‘৬ দফা মানতে হবে, না হলে বাংলা স্বাধীন হবে’, মুজিব তোমার ভয় নাই, সারা বাংলা তোমার সাথে, বাঙ্গালীরা তোমার সাথে’”।
জনসভায় বক্তব্য রাখেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোস্তাক ও চট্রগ্রামের জহুর আহম্মদ চৌধুরী। মঞ্চে নোয়াখালীর আবদুর রশিদ, আবু নাছের চৌধুরী, ফেনীর খাজা আহম্মেদ, লক্ষীপুরের নাছির আহম্মদ ভূঁইয়াসহ নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্রগ্রাম অঞ্চলের পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চের নিচে সামনের সারিতে ছাত্রনেতা আ.স.ম আবদুর রব, মোহম্মদ হানিফ, মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, মোহাম্মদ উল্যাহ, মমিন উল্যা, লোকমান গাজী, জয়নাল আবেদীন, শাহজাহান কামাল, আলা উদ্দিনসহ বিপুল সংখ্যক ছাত্রনেতা উপস্থিত ছিলেন।
ভিপি মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, বেগমগঞ্জ দীঘিরপাড়ের ওই সভা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে আওয়ামী লীগের ৬ দফা মেনে নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার চিরন্তন ভুল বোঝাবুঝির অবসান মিটানোর আহব্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর জনসভার ওই স্থান বেগমগঞ্জ দীঘিরপাড়কে স্বরণীয় করে রাখতে সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি উঠেছে স্থানীয়ভাবে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুব আলম জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওই সভার স্থানে এখনো কোনো স্মৃতিফলক নির্মিত হয়নি। তবে ওই স্মৃতি ধরে রাখতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্পাদনা: তিমির চক্রবর্ত্তী