আমাদের সময় : ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ দ্বারা পরিচালিত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর ছাড়াই হতে পারে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও এখনো নিশ্চিত নয় বড় এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়।
ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয়ে আলেচনার জন্য ওই ৪ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু নির্বাচিত বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে শিগগির বৈঠকে বসবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ প্রসঙ্গে কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতি চালুর সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আপত্তি জানিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত না হয়, তাকে বাদ রেখেই সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতি শুরু করা হবে। তবে আশা করছি, কেউ বাদ যাবে না। এখনো সময় আছে, আলোচনাসাপেক্ষে সবাই একমত হবেন।
পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে ২৩ জানুয়ারি ইউজিসির এক মতবিনিময় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য বা তাদের মনোনীত প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। সভায় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানান, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটকে এই সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতির অগ্রগামী দলে দেখতে চান। তারা বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় না এলে অন্যদের মধ্যেও অনাগ্রহ দেখা দিতে পারে।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে কী সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে, জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, এর অনেক সুবিধা রয়েছে। মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। যাতায়াত ব্যয় কমবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে একই সময়ে পরীক্ষা হবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে। এ পদ্ধতিতে এক সময় না এক সময় যেতে হবেই। পুরো চীনে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা নিয়ে নম্বর অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দিয়ে দেয়, সে অনুসারে তারা ভর্তি হয়ে যায়। এক প্রদেশের শিক্ষার্থীরা অন্য প্রদেশে চলে যায়।
তিনি বলেন, আমাদের যে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেগুলো দিয়ে শুরু করার কথা। যাদের অবকাঠামো দুর্বল বা এখনো অসম্পূর্ণ, তারা পরে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স/প্রতিষ্ঠাকাল অনুসারে চক্রাকারে পরীক্ষা নেবে।
ড. সামাদ বলেন, চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিষয়টিও দেখতে হবে। আমি স্বায়ত্তশাসিত ও বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেছিলাম। এবার স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি না পারে, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হোক- এ রকম প্রস্তাব এখানে আসছে। এবার থেকে পারলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এর মাধ্যমে সমাজের মঙ্গল হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাউন্সিলে বিষয়টি একবার আলোচনা করা হয়েছিল। সেখানে শিক্ষকরা সমর্থন করেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আরও পর্যালোচনা করা উচিত। হুট করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। ’৭৩ অধ্যাদেশ অনুযায়ী যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে, অন্তত সেগুলোয় আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া উচিত। সব শিক্ষকের মতামত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের করতে হবে- যাতে এর সুফল আসে।
সারাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। অনেক সময় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা একই তারিখে পড়ে যায়। এসব জটিলতা দূর করা, সময় ও অর্থ ব্যয় কমানোর কথা চিন্তা করে ২০১০ সাল থেকে সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।