গাজী নাসিরুদ্দিন আহমেদ : বিএনপির উপর নির্যাতন হচ্ছে, মামলায় তারা হয়রান হচ্ছে, তাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে সেগুলো সব সত্যি। পুলিশের ভয়ে তারা রাজপথে নামতে পারছে না, মিথ্যা নয়। তাদের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে দেয়া হচ্ছে না। ইন্ডিপেন্ডেন্টলি ভেরিফাই করতে পারিনি। ঢাকা উত্তরে সিপিবির ১৫ হাজার ভোটার ভোট দিয়েছেন তাদের প্রার্থীকে। ক্ষমতা পরিবর্তন করার ভোটশক্তি তাদের নেই। ধরে নিলাম বিএনপির আছে। প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কী খাতা-কলমে না বাস্তবে? ২০১৪ নির্বাচনের আগে যে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন তারা করেছিলো সেই সহিংসতার একটি বড় কারণ ছিলো আমাদের নাগরিক সমাজের বড় একটা অংশের ইন্ধন। জামায়াতের মাসলও ছিলো তাদের কাছে। একটা ফলস বিশ্বাস বিএনপি শিবিরকে কেউ কেউ দিয়েছিল যে, ওই নির্বাচনটা হবে আরেকটা ১৫ ফেব্রুয়ারি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও আগাম নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। এখানে একটি বড় কিন্তু আছে, অনেকেই বলেন, প্রধানমন্ত্রী সে কথা রাখেননি। বলে রাখা ভালো, প্রধানমন্ত্রী বিএনপির দাবি মোতাবেক তথাকথিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবেন বলে কোনো আশ্বাস দেননি। ওদিকে বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন না করার দাবি থেকে সরে আসেনি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রস্তুতি ছিলো না বিএনপির। কেউ তাদের আশ্বাস দিয়েছিলো, ২০০৭ এর ২২ জানুয়ারির ঘোষিত নির্বাচনের আগে যেমন ১১ জানুয়ারি আর্মি টেইকওভার হয় এবারও সে রকম ঘটতে যাচ্ছে। দুটো বড় ব্লাফ বিএনপিকে রাজনীতির মূলস্রোত থেকে বিচ্যুত করে। সেই হ্যাংওভার এতো তাড়াতাড়ি কাটার কথা না। আজকে তাদের যে অসংগঠিত অবস্থা, নিজেদের নেতাকর্মীদের আস্থাহীনতা সেটাকে আরো তীব্র করে তুলেছে। সরকারি যন্ত্র ও নেতাকর্মীদের প্রভাবের চেয়ে দলের বেহাল অবস্থাই এই নির্বাচনী ফলাফলের জন্য দায়ী। আমাদের সুশীল বা নাগরিক সমাজ মনে করে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষই এখন সরকারবিরোধী। বিএনপির হয়ে তারা যে আওয়াজটা তুলেছে এর প্রমাণ কিন্তু বিএনপিকেই করতে হবে।
আওয়ামী লীগ এসে করে দেবে না। মনে করতে পারি, ১৯৯৬ সালে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কিন্তু তারা আদায় করে নিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই বিএনপিকে কলা ছিলে দেবে না খেতে। বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগকে আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ২১ বছর রাজনীতি করতে হয়েছে। ৭৫, ৮৮, ২০০১, ২০০৪ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ আবার বাংলাদেশ করায়ত্ত করেছে যার কোনোটাই বিএনপিকে এখনো সহ্য করতে হয়নি। সো সরকারি নির্যাতন থাকলেও বিএনপিকেই রাজনীতি করে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে। বরাবর তারা যেটা পেয়েছে সেই সেনাবাহিনী, বিদেশি বন্ধু কেউ এখন আর তাদের গোপন পথ বাতলে দেবে না। শর্টকাটের উপায় নেই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :