শিরোনাম
◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৩:৪৩ রাত
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৩:৪৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকায় বাজল সাহানার রেডিও

সিরাজুল ইসলাম: ঢাকার দুই সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নারীপ্রার্থীদের মধ্যে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল সমর্থিত ছয়জনের প্রচারের ডামাডোলে আড়ালেই ছিলেন সাহানা আক্তার; কিন্তু ভোট শেষে হাসলেন শুধু এই ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীই।

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে সমানতালে লড়ে নিজের জয়ের জন্য স্থানীয় পুলিশের ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা পালনকে অন্যতম কারণ দেখাচ্ছেন তিনি।

সাহানা শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রেডিও প্রতীক নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৬২ ভোট; তিনি হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নাসির আহম্মদ ভুইয়াকে; যার ভোট সংখ্যা ২ হাজার ২৫০।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি মিলিয়ে এখন ১২৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১২৯ জন নবনির্বাচিত কাউন্সিলরের মধ্যে সাহানাই একমাত্র নারী। অথচ এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে দুজন এবং বিরোধী দল বিএনপি থেকে চারজন সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।

দলের ছায়া নিয়ে তারা ভোটের লড়াইয়ে উৎরাতে না পারলেও দলবিহীন সাহানা উৎরে গেছেন অনেকটা অনায়াসে।

জয়ের পেছনে সাহানা কয়েকটি কারণ দেখান, তার মধ্যে একটি হল পুলিশের ভূমিকা।

তিনি বলেন, শ্যামপুর থানার পুলিশ একদম নিউট্রাল ছিল। তারা কোনো দলের হয়ে কাজ করেনি। এখানে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হয়নি। সবাই নিজেদের ভোটটা দিতে পেরেছে। এটা আমার জয়ের আরেকটি কারণ।

শ্যামপুর, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া থানার বিভিন্ন এলাকা নিয়ে গঠিত ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫ বছর কমিশনার ছিলেন সাহানার বাবা সাইদুর রহমান, যিনি সহিদ কমিশনার নামেই পরিচিত ছিলেন।

কয়েকটি খুনের মামলার আসামি সহিদ কমিশনারের নানা কুখ্যাতি থাকলেও সাহানার ভাষ্যে, তার বাবার প্রতি সহানুভূতি থেকেই এলাকার মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে।

বাবার মাধ্যমেই মানুষ আমাকে চিনেছে। বলেছে, তোমরা এত উপকার করছ, তোমার বাবা উপকার করছে, তোমাকেই ভোট দেব।

সাহানারা চার ভাই-বোন মিলে তার বাবার নামে একটা ফাউন্ডেশনও গড়ে তুলেছেন, যেখান থেকে মেধাবী গরিবদের বৃত্তি দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী সাহানা ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এলএলএম সম্পন্ন করেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতাও নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন সাহানা।

যখন আমি প্রচারণায় নেমেছি, তখন বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম আর নারী ভোটাররা চেয়েছে একজন শিক্ষিত মানুষ আসুক, আমাদের সমাজের উন্নয়ন হোক। মুরুব্বিরাও চেয়েছে আমাকে।

কাউন্সিলর নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী দিয়েছে, সাহানার বাবাও এক সময় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সংস্রবে ছিলেন। কিন্তু মেয়ে সে পথে হাঁটেননি।

সাহানা বলেন, রাজনীতি করতে নয়, বরং মানুষের সেবা করতেই কাউন্সিলর নির্বাচন করেছি। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমি মনে করি, মানুষের সেবা করতে হলে একটা প্লাটফর্ম দরকার। আমার মনে হয়েছে, এটা একটা প্লাটফর্ম।

কোনো রাজনৈতিক দলের না হওয়ায় দল-মত নির্বিশেষে সবার সমর্থন পেয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

ভোটের মাঠে নামার পর নানা প্রতিবন্ধকতা পেরুনো কথাও বলেন সাহানা। তিনি বলেন, আমি নারী বলে তাদের সাথে টিকতে পারব না, সেটা তারা ধরেই নিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ আমার পাশে ছিল। আমাকে তারা সাহস দিয়েছে। অন্য প্রার্থীরা আমার পোস্টার-ব্যানার কিছু রাখেনি, ছিঁড়ে ফেলেছে। কিন্তু আমি সবার দ্বারে দ্বারে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

ভোটগ্রহণের আগের রাতে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ বাসায় ঢুকে দুই ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছিল বলেও জানান তিনি।

সাহানা বলেন, আমাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য র‌্যাব ও ডিবির লোকজন এসে দুই ঘণ্টা আমার বাসা তল্লাশি করেছে, বাসায় নাকি অবৈধ অস্ত্র আছে। কিন্তু তারা কিছুই পায়নি। বরং আমার মনোবল আরও শক্ত হয়েছে।

সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে নারী হিসেবে কাজ করাটা যে কঠিন, সেটাও বলেন সাহানা। তিনি বলেন, আমাদের সমাজটা পুরুষশাসিত। তারা চায় না একটা নারী ক্ষমতায় আসুক, এটা তারা মেনে নিতে পারে না। আমি এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি আমার বাবার শক্ত সাপোর্টে। উনি না থাকলে হয়ত সম্ভব হত না জেতা। সূত্র: বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়