শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৭:৪২ সকাল
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৭:৪২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নে ক্ষতিপূরণ সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা

যুগান্তর : কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত (বন্ধ) হলে প্রত্যেক আমানতকারী সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো গ্রাহকের একাধিক অ্যাকাউন্টে এক লাখ টাকার বেশি থাকলেও তিনি সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকাই পাবেন।

এমন বিধান অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়েছে ‘আমানত সুরক্ষা আইন-২০২০’ এর খসড়া। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্টদের মতামত চেয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে আইনের খসড়াটি বড় আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে না।

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমানত সুরক্ষা আইনে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হলে এক লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ পাবেন না গ্রাহক।

এ ক্ষতিপূরণ খুবই কম। এতে গ্রাহকরা ধীরে ধীরে আমানত তুলে নেবেন। কারণ একজন গ্রাহকের ৫ লাখ টাকার এফডিআর আছে ব্যাংকে। ওই ব্যাংক অবসায়ন হলে ৪ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ক্ষতি হবে।

এ আইনটি সঠিক হচ্ছে না। এতে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবাহ কমবে। আর আমানত কমলে ঋণ দেয়ার ক্ষমতাও কমবে ব্যাংকের। আর ঋণ দিতে না পারলে বিনিয়োগ হবে না। যা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের বিধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগেই ছিল। কোনো ব্যাংক অবসায়ন হলে ওই ব্যাংকের গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকা দেয়ার বিধান ছিল।

এ আইনটি মূলত ছোট আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য। একজন গ্রাহকের ১ কোটি টাকা ব্যাংকে থাকলে সে ক্ষেত্রে অবসায়ন হলে ওই গ্রাহকের পুরোটা ক্ষতি হচ্ছে।

সুরক্ষা আইনে তার কোনো লাভ হচ্ছে না এমন প্রশ্নে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বড় গ্রাহকরা তার টাকার সুরক্ষার জন্য নিজেরা কিছু করছেন না। এটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে বীমা করে করা হচ্ছে। যে কারণে বড়দের নিয়ে ব্যাংকগুলো সেভাবে ভাবছে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতি ড. মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, খসড়া আইনের ওপর মন্তব্য করা ঠিক নয়। তবে যদিও এমন হয়, যে একজন গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা আছে, আর ওই ব্যাংকটি অবসায়নের পর গ্রাহক সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ পাবেন না। এটি গ্রহণযোগ্য নয়, সঠিকও হবে না।

সূত্র জানায়, আমানত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়, এর অধীনে কোনো কার্যক্রমের ব্যত্যয় ঘটলে দায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা বা ফৌজদারি আইনে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।

আর কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পর পর দু’বার বীমার প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না। টানা দু’এর অধিক প্রিমিয়াম দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হবে।

বর্তমান সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ কোটি হিসাবধারী গ্রাহক বা আমানতকারী আছেন। তাদের জন্য আমানত সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর আগে ব্যাংক আমানত বীমা আইন-২০০০ ছিল।

ওই আইনের মাধ্যমে আমানতকারীদের কিছুটা সুরক্ষার দেয়ার বিধান ছিল। সেখানেও ব্যাংক অবসায়ন হলে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা দেয়ার বিধান রয়েছে। সে আইনটি রহিত করে নতুনভাবে আমানত সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমানতকারীদের আমানতের দিক বিবেচনা করে আইনটি যুগোপযোগী করা হচ্ছে। অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। তবে অধিকাংশের আর্থিক সূচক খুব বেশি ভালো নয়। গ্রাহকদের সুরক্ষা দিতে আইনটি আরও শক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

সূত্রমতে, গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিতে, তহবিল পরিচালনা ও প্রশাসনের জন্য আমানত সুরক্ষা আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রাস্ট তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস এ তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ড হবে।

এ তহবিলে বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা জমা রাখা হবে। এছাড়া কোনো ক্ষেত্রে এ তহবিলের টাকা বিনিয়োগ করলে সেখান থেকে যে আয় আসবে সেটিও তহবিলে জমা রাখা হবে।

পাশাপাশি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত হলে সেখান থেকে প্রাপ্য অর্থও আসবে তহবিলে। আর তহবিলের পুরো অর্থ ব্যয় হবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পেছনে। বিশেষ করে কোনো প্রতিষ্ঠান অবসায়িত হলে ওই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তবে বিদ্যমান আয়কর আইনের কোনো বিধান ট্রাস্ট তহবিলের ওপর প্রযোজ্য হবে না।

খসড়া আইনের বিধানে বলা হয়, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের পর তার আমানতকারীদের যে অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রাস্ট তহবিল পরিশোধ করবে সেটি সংশ্লিষ্ট দেউলিয়া হওয়া ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিট সম্পদের বিপরীতে যে তারল্য থাকবে তা সমন্বয় করা হবে। এখানে অবসায়ন বলতে কোনো কোম্পানি কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা, বন্ধ করা এবং দায়-দেনা নিষ্পত্তি করাকে বোঝায়।

খসড়া আইনে আরও বলা হয়, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, নতুন আইন প্রবর্তনের তারিখে বিদ্যমান প্রত্যেক বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওই তারিখ থেকে তহবিলের সঙ্গে বীমাকৃত বলে গণ্য হবে।

আইনটি প্রবর্তনের পর প্রত্যেক প্রতিষ্ঠিত তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রাস্ট তহবিলের সঙ্গে বীমাকৃত হবে। এছাড়া প্রত্যেক বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের আমানতের অংশের ওপর প্রতি বছর এ তহবিলে প্রিমিয়াম প্রদান করবে।

এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময় সময় নির্ধারণ করে দেবে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিয়ে প্রিমিয়ামের হার কমবেশি করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যয় খাত থেকে প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশোধ করবে।

প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থতা প্রসঙ্গে বিধানে উল্লেখ করা হয়, কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সংরক্ষিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অর্থ থেকে তা কেটে তহবিলে জমার নির্দেশ দিতে পারবে।

এক্ষেত্রে দেরি হওয়ার কারণে ওই প্রিমিয়ামের ওপর দণ্ড সুদ আরোপ করা হবে। তবে পরপর দু’বার প্রিমিয়াম দিতে ব্যর্থ হলে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি শুনানির আয়োজন করবে।

এ প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহে বিরত থাকার নির্দেশ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বেশি প্রিমিয়াম দিতে ব্যর্থ হলে ট্রাস্টি বোর্ড ওই প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ গ্রহণ করবে। আর অবসায়িত প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের তালিকা ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়