শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:১৭ সকাল
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের নির্বাচন আর সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে নেই

কামরুল হাসান মামুন : বাংলাদেশের নির্বাচনকে ধীরে ধীরে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেটা আর সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে নেই। এখন এমন নির্বাচন হয় যেখানে নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রকার ঁহপবৎঃধরহঃু বা অনিশ্চয়তা থাকে না। অনিশ্চয়তাই হলো আনন্দ ও প্রাণের আঁধার। আমাদের জীবন থেকে অনিশ্চয়তা বিয়োগ করে দিয়ে যদি এমন জীবন হতো যেখানে ঘটে যাওয়া সব কিছু আগে থেকে নিশ্চিতভাবে জানতাম তাহলে জীবনটা আনন্দময় হতো? ধরুন কোনো এক জোতিষী আমার জীবনের খুঁটিনাটি যা কিছু ঘটবে তার সব কিছু বলে দিলো। কী চাকরি করবো, কাকে বিয়ে করবো, কয়টি ছেলেমেয়ে হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, অর্থবিত্ত কেমন হবে, কবে কী অসুখ হবে, কবে মারা যাবো ইত্যাদি। আমার তো ধারণা এটা হতো কল্পনাতীত বোরিং একটি জীবন। আমাদের জীবনটা কী আনন্দের হয় কারণ যাপিত জীবনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে কিছু না কিছু ঁহপবৎঃধরহঃু বা ঢ়ৎড়নধনরষরঃু যুক্ত থাকে। সফল বা ব্যর্থ দুটো হওয়ারই সম্ভাবনা থাকে। সেটার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে বা কাজের মাধ্যমে করা যায়, কিন্তু কোনোটাকেই শূন্য করা যায় না। এটাই প্রকৃতির পছন্দ।
কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের নির্বাচন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এখানে অনিশ্চয়তা বলতে কিছু নেই। সরকারি দলের মেয়ররা জিতবেই। এমনকি কাউন্সিলরদের মধ্যেও সরকার যাকে যাকে চায় তারা জিতবেই। এই কথাটিই তো আমি কয়েকদিন আগেই বলেছি এবং লিখেছিও। আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কারও জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কেউ পাস করতে চায় কিনা সেটাই আমার সন্দেহ। এর আগে গাজীপুর, রাজশাহী, সিলেটের মেয়রদের পরিণতি নিশ্চয়ই প্রার্থীরা জানেন। জেল, মামলা ইত্যাদিতে একদিকে তারা জর্জরিত হবে। এই জন্য বিএনপি তেমন কোনো শক্ত প্রার্থীও দেয়নি। আর অন্যদিকে ভোটাররাও শাস্তি পাবে কেন তারা পাস করলো। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কোনো বরাদ্দ দেওয়া হবে না। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের সব গ্রামারকে মুছে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন এখন কেবল ভোটের দিনে একটা ভোটের আয়োজন আর ভোট ভোট খেলার আয়োজনটা বাকি ছিলো। তাই এ সব নির্বাচনে জনগণ আর উৎসাহ পায় না তাই কেউ ভোট দিতে যেতে আনন্দ পায় না। এই ভোট দিতে না যাওয়া কিংবা কম ভোট পড়াটাকেও সরকারের নীতিনির্ধারকরা একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। এই কম ভোট পড়াটা নাকি দেশ উন্নত হওয়ার লক্ষণ। তাহলে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাম্পেইন কিসের লক্ষণ ছিলো? একটি দেশে মিছিলে যাওয়ার জন্য, পোস্টার লাগানোর জন্য, মাইকিং করার জন্য অগণিত মানুষ তখনই পাওয়া যায় যখন দেশে প্রচুর বেকার লোকজন থাকে। দেশে বিপুল পরিমাণ বেকার ছিলো বলে তাদের টাকা-পয়সা, হোন্ডামোন্ডা দিয়ে ক্যাম্পেইন করানো গেছে। সত্যি সত্যি যদি দেশ উন্নত থাকে তাহলে এর নির্বাচনী ক্যাম্পেইনও হতো উন্নত দেশের মতো। পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে কী এ রকম পোস্টারে ছেয়ে যায়? পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে কী এ রকম মাইকিং করে দেশের মানুষের কানের পর্দা ফাটায়? তবে এবারের নির্বাচনে আরেকটি নতুন সংযোজন। সেটি হলো প্লাস্টিকের পোস্টার। বিবিসি বাংলার নিউজ পোর্টালে লিখেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার জন্য প্রথম বারো দিনে প্রায় ২৫০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। এমনিতেই ঢাকা হলো পৃথিবীর সর্ব নিকৃষ্ট নোংরা শহর। বায়ু দূষণের দিক থেকে পৃথিবীর এক নম্বর শহর। সেই শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার যারা দায়িত্ব নেবেন তারাই নগরকে এ রকমভাবে অমার্জনীয় অন্যায়টা করলেন। এই নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে। আপনারা তো জানতেন আপনারা জিতবেন। তবে কেন এই বর্জ্যে ডোবালেন? এই প্লাস্টিক পোস্টারকে যদি এখন পোড়ানোও হয় তবুও ক্ষতি আবার না পোড়ালেও ক্ষতি। এমনিতেই বিরোধীদলের মধ্যে তেমন উৎসাহ ছিলো না। কারণ বেশি উৎসাহ দেখলেই জামায়াত-বিএনপির ট্যাগ লেগে গেলে তাদের জীবন অতিষ্ঠ যাওয়ার সম্ভাবনা।
যেই বিপুল পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত ক্যাম্পেইন দেখলাম আর যেই পরিমাণ ভোট পড়েছে দেখলাম সেটাও একটা বার্তা দেয়। হয়তো এই পরিমাণ ক্যাম্পেইন না করলে ভোট আরও কম পড়তো। সেইদিক থেকে সরকারি দল ঠিক কাজটিই করেছে। একদিকে বিরোধীদলকে ক্যাম্পেইনে বাধা বা নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আর অন্যদিকে তারা যেই পরিমাণ পোস্টার লাগতো সেটা সরকারি দল বেশি লাগিয়ে পুষিয়ে দিয়েছে। এই ধরনের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো সরকারি কর্মকর্তাদের অসৎ বানিয়ে দেওয়া। তাদের দিয়ে এই অন্যায় খারাপ কাজ করানোর ফলে অনেক সৎ অফিসার আছে যারা মর্মবেদনায় ভুগবে। তাদের মধ্যে অনেকেরই মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয় আরেকটি সমস্যা হলো এই কর্মকর্তারা সরকারের দুর্বল দিক জেনে গেছে, তাই তারা সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে অন্যায় সুবিধা আদায় করবে। ইতোমধ্যেই তারা করতে শুরু করেছে। সচিবের পদকে এখন দুই-তিন ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের সুবিধাদি অনেক অনেক বাড়িয়ে নিয়েছে। সাধারণ উপজেলা লেভেলের কর্মকর্তারাও এখন কোটি টাকার গাড়ি পেয়েছেন বা পাচ্ছেন। অপ্রয়োজনীয় কারণে বা নামকাওয়াস্তে কারণে বিদেশ ভ্রমণের মাত্রা বেড়েছে। বিভিন্ন মিটিংয়ে থেকে সিটিং মানি পাচ্ছেন। এই সরকারি কর্মকর্তাদের অসৎ পথে ঠেলে দিলেন তার সুদূরপ্রসারী ইমপ্যাক্ট বুঝতে পেরেছেন তো?
ক্ষতি যেটা হয়ে গেলো সেটা হলো ভবিষ্যতে এই ভোটারদের সহজে আর ভোটমুখী করাটা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে গেলো। আর এ জন্য আওয়ামী লীগের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে যাবে। এমনই একটি নির্বাচন হলো যে জেতার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে পর্যন্ত তেমন খুশির উচ্ছ্বাস দেখছি না। ফেসবুকে অভিনন্দন জানিয়ে তেমন কোনো পোস্ট দেখছি না। আচ্ছা যারা জিতেছেন তাদের কী আনন্দ হচ্ছে? এই জেতায় যারা মূল কারিগর ছিলেন তাদের কী আনন্দ লাগছে? ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়