ইমতিয়াজ মাহমুদ : আমার কেন্দ্রে ভোটার ছিলো না বললেই চলে। আমার স্ত্রী আর আমি আমরা দুজনে গেছি মূলত সিপিবির মেয়র প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য। ইভিএমএ ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিলো না। এই প্রথম দেখলাম মেশিনটা। আমি এমনিতেই নয়া প্রযুক্তির পক্ষেÑ ইভিএম মেশিন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আর এই মেশিনগুলো কোনো সার্ভারের সঙ্গে বা অন্য কোনো যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না। আমার মনে হয় না এ সব মেশিন ব্যবহার করে কোনো রকম জাল জালিয়াতি করা সহজ হবে। কয়েকজনের কাছে শুনেছি যে কোথাও কোথাও ভোটারের সঙ্গে অন্য লোকজন পোলিং বুথে ঢুকে পড়ে। সেটা তো আর মেশিনের সমস্যা নয় আর কি।
যেটা খুব চোখে লেগেছে সেটা হচ্ছে ভোটারের অনুপস্থিতি। বিশাল স্কুলজুড়ে ভোটের কেন্দ্র। তিনটা বিল্ডিং মিলিয়ে অনেকগুলো বুথ। সামনে বিশাল মাঠ। মাঠজুড়ে র্যাব, পুলিশ, আনসার এ রকম সব লোকজনের ভিড়। প্রেসের লোকজন আছে। কয়েকজন সাদা চামড়ার লোককেও দেখলাম- অবজার্ভার হবে নিশ্চয়ই। প্রার্থীদের পক্ষের লোকজনও আছে- গিজগিজ করছে কাউন্সিলার প্রার্থীদের পক্ষের লোকজন। মেয়র পদে নৌকার সমর্থক কর্মীরাও ছিলো অনেক।
বিএনপি প্রার্থীর কর্মীও দেখিনি এজেন্টও দেখিনি। আমি যে বুথে ভোট দিয়েছি সেখানে তিনজন এজেন্ট ছিলোÑ তাদের একজনের আবার গলায় কোনো ব্যাজফ্যাজ নেই। আমি জিজ্ঞাসাও করলাম একজনকে, কাস্তে মার্কার বা ধানের শীষের কেউ আছেন কিনা। কেউ জবাব দিলেন না। সবই ছিলো ভোটকেন্দ্রেÑ কেবল ভোটাররাই অনুপস্থিত। মাঝে মাঝে একজন-দুইজন ভোটার গেলে সবাই তৎপর হয় উঠেন। আমরা যখন ভোট দিতে গেছি তখন দুপুর একটার কাছাকাছি। নৌকা মার্কার ব্যাজ গলায় ঝোলানো তিন ভদ্রমহিলাকে দেখলাম মাঠের এক কোণায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্যাকেট থেকে বিরিয়ানি মারছেন। আমি যখন ভোট দিতে গেছি তখন একজন ভোটার ছিলেন বুথের ভেতর। আমি যখন ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসছি তখন আমার পরে আর কোনো ভোটার ছিলো না সেখানে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পোলিং অফিসার যারা ছিলেন তারা সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ নিলেন। ভোট দেওয়ার পর ভোটার নম্বর নিয়ে লিস্টে স্বাক্ষর নিলেন, আঙ্গুলে কালি দিলেন। কিন্তু ভোটার তো নেই। সর্বশেষ পার্লামেন্ট ইলেকশনে ভোট দিয়েছিলামÑ যেটাকে আপনারা নৈশভোটের নির্বাচন বলেন সেইটা।
সেবারও কেন্দ্রে কিছু ভোটার ছিলো। এবার একদম গোল্লা নয় বটে, কিন্তু প্রায় গোল্লার মতোই অবস্থা। আমি সকাল থেকে ভোটারের আনাগোনা লক্ষ্য করছিলাম। সকালের দিকে তো একদম কাউকে আসতেই দেখিনি। দুপুরে গিয়ে যে হার দেখলাম তাতে সারাদিনে দশ কি পনেরো পারসেন্ট ভোট হয় কিনা সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে। টেলিভিশনে দেখলাম এইটাই সারা শহরের ট্রেন্ড। ফোনে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদেরও একই অনুমান। কাউন্সিলার প্রার্থীরা তোড়জোড় করে মানুষকে ডেকে আনছে, না হলে মোট গৃহীত ভোটের হার সিঙ্গেল ডিজিট ছাড়াতো কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ করেছেন কেউ কেউ।
আওয়ামী লীগ জিতুক বা বিএনপি জিতুক যারা জিতবে তারা নগর ভবনে গিয়ে উঠবেন, ক্ষমতা নেবেন, টাকা বানাবেন। সেগুলো তো আছেই। কিন্তু এই যে ভোটাররা ভোট দিতে এলো না, সেটাকে আপনারা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ভোটাররা যে ভোট দিতে এলেন না তার মানে কী? শতকরা বিশ বা পঁচিশ শতাংশ ভোট যেখানে পড়ে, সেখানে যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন সেই ব্যয়ের নৈতিক বৈধতা আছে? ধরেন একশ ভোটারের মধ্যে কেউ যদি এগারো বা বারো ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে গেলোÑ সেই বিজয়ী প্রার্থীর কী একটু শরম লাগবে না? শহরের একানব্বই পারসেন্ট মানুষ তাকে সমর্থন করেন না এটা ভেবে তিনি কী একটুও শরমিন্দা হবেন না? তারা তো সব লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ফেলেননি নাকি? আর এই নির্বাচনকে আপনি কী বলবেন? তিরিশ লাখ ভোটারের মধ্যে ধরেন পঁচিশ লাখ মানুষই ভোট দিলো না, বা ধরেন বাইশ লাখ ভোটারই ভোট দিলো না। আমরা কী তবে বলতে পারি যে জনগণ এই নির্বাচন বয়কট করেছে? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :