হাবিবুর রহমান ,নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলার গর্জনিয়া কচ্ছপিয়াসহ আশ পাশের অন্তত ১২ হাজার একর ফসলি জমিতে হচ্ছে তামাকের চাষ।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, ফসলি জমিতে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদের সচেতন করা হলেও তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় উদ্যোগের কারণে চাষ বাড়ছে।
চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কক্সবাজারের মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর দুই তীরের পাঁচ হাজার একর জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। নদী তীরের এসব জমিতে হতো শাকসবজির চাষ। এছাড়া বন বিভাগের কিছু জমিতেও তামাক চাষ শুরু হয়েছে।
শনিবার দুপুরে রামু উপজেলার গর্জনিয়া কচ্ছপিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক হাজার একর ফসলি জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে রোপণ করা তামাক পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। ইউনিয়নের বুমাংখিল গ্রামের কৃষক ইসলাম বলেন, মাত্র মাস হলো তামাক চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী মার্চ মাসে তামাকপাতা কেটে চুল্লিতে পোড়ানো হবে। তত দিনে প্রয়োজনীয় কীটনাশক, সার ও প্রয়োজনীয় অর্থ তামাক কোম্পানিগুলো সরবরাহ দেবে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ও কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোঃ ইসমাইল নোমান পৃথকভাবে বলেন, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও উখিয়ারঘোনা এলাকায় তামাক চাষ বেড়ে গেছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি সরকারি খাস ও পতিত জমি, বাঁকখালী নদীর দুই তীর এবং সামাজিক বনায়নের জমিতেও তামাকের আবাদ হচ্ছে।
জীবিকার জন্য পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল নন আবুশাহমা, তবুও প্রতিদিন পাহাড়ের দিকে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে থাকেন তিনি। বছরের পর বছর যে কৃষিকাজ ও মাছ ধরে জীবন চালিয়ে আসছেন, পাহাড়ের মাটি সেই বাকঁখালী নদীর দুকূল ভরাট করে ফেলছে। বদলে যাচ্ছে নদী, সঙ্গে মাছের আবাসস্থলও। “পাহাড়ের মাডি আসি নদী ভরি গেছে, এহন মাছ কই পামু?” পঞ্চাশোর্ধ্ব আবুশাহমার বাস বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির আদর্শ গ্রামে; মাছ ধরেন বাকঁখালী খাল, দৌছড়ি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি খালে। ওইখান থেকেই দেখা যায় নাইক্ষ্যংছড়ি আর গর্জনিয়া কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের পাহাড়গুলো।
কেন মাটি আসে- এ প্রশ্নে স্বল্পভাষী এই লোক বলেন, “তামুকের জন্য গাছ কাইটলে মাটি আইসবে না? এজন্যিই তো তামুকের ক্ষেতের পাশে মাছ হয় না।”ভরাট হয়ে যাওয়া নদীতে বছরে ৮-১০টি ‘ঢল’ কূল ছাপিয়ে উঠায় মাছ ধরতে সমস্যার কথা জানান শাহমা বলেন, জীবিকার জন্য আর কোনো কাজ না করায় এখন পেশাও ছাড়তে পারছেন না। “বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে মাছ ধরি। আর কোনো কাম করি নাই। এহন এমুন অবস্থা, কোনো কোনোদিন ৩০ টাকার মাছ নিয়াও ফিরতে অয়।”লেখাপড়া না জানা এ জেলে এক সময় পরিবার নিয়ে ‘সুখে দিন কাটাতেন’, তখন নদীর দুই পাশে ছিল ঘন জঙ্গল। আর এখন তামাক পোড়াতে গাছ কাটার ক্ষতি পোহাচ্ছেন, থেকে থেকে পুরনো দিনের কথা ভেবে ফেলছেন দীর্ঘশ্বাস।
পরিবেশকর্মীরা জানান, গত ২ বছরে উল্লেখিত উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এবার আরও বেশি হতে পারে। ইতিমধ্যে ১২ হাজার একরে তামাকের চারা রোপণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, তামাক চাষ ক্ষতিকর জেনেও কৃষকেরা টোব্যাকো কোম্পানির অতি উৎসাহী পদক্ষেপ ও অধিক লাভের আশায় চাষ অব্যাহত রেখেছেন। তামাক চাষের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে পড়তে হবে। কারণ বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ কেটে এনে পোড়ানো হয় তামাকচুল্লিতে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কৃষি বিভাগকে আরও কঠোরভাবে কাজ করতে হবে।
কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বলেন, বনকর্মীরা এখন সতর্ক। আগের মতো বনাঞ্চল উজাড় করে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বনজ সম্পদ রক্ষার স্বার্থে তামাক চাষ–অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এবার জোরালো অভিযান চালানো হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, কক্সবাজার ও বান্দরবানের প্রায় ১২ হাজার একর জমিতে এখন তামাকের চাষ শুরু হয়েছে। নদীর তীর বা বনভূমিতে তামাক চাষ হলে তা উচ্ছেদ করা হবে। সম্পাদনা: জেরিন
আপনার মতামত লিখুন :