শিরোনাম
◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের সাক্ষর  ◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারী, ২০২০, ০৭:১৪ সকাল
আপডেট : ৩০ জানুয়ারী, ২০২০, ০৭:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইশতেহারের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই

ইত্তেফাক: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তারা নির্বাচনি ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা কতটুক বাস্তবায়নযোগ্য তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের যে আয়, তা দিয়ে রাজধানী ঢাকাকে প্রতিশ্রুত পর্যায়ে উন্নত করা মোটেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার দুই সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ নয়টি রাজনৈতিক দলের মোট ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জানা গেছে, নির্বাচনি প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা। জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, নারীর নিরাপত্তা, মশা দমন, সুপেয় পানি সরবরাহ, বিদ্যুত্-গ্যাসের সমস্যা সমাধানসহ নানা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তারা। আবার কোন কোন প্রার্থী রাজধানী ঢাকাকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

প্রার্থীদের এসব প্রতিশ্রুতি বিচার-বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই সিটি করপোরেশনের আয়ের বেশির ভাগ চলে যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে। বাকি যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন একেবারেই অসম্ভব। তবে সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব আয়ের বাইরে স্থানীয় সরকার এবং বৈদেশিক খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকে। পরিস্থিতির বিচারে সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার মন্তব্য এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নজর ছাড়া রাজধানী ঢাকাকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব না।

দুই সিটির বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ও অন্যান্য ব্যয়েই বেশিরভাগ অর্থ খরচ হয়। এবছর রাজস্ব ব্যয় মিটিয়ে ও সব খরচ বাদ দিয়ে দুই সিটির উন্নয়নের জন্য দক্ষিণে ব্যয় হবে দুই হাজার ৮৯৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, আর উত্তরে ব্যয় হবে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড রয়েছে মোট ৭৫ টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট ছিল ৩ হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর আগে গত অর্থবছরে এ বাজেট ছিল ৩ হাজার ৫৯৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এবছর দক্ষিণ সিটিতে হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজার সালামিসহ বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৯৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অন্য খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বাজেটে সরকারি ও বৈদেশিক উত্স থেকে আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ঘোষিত বাজেটে মোট পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অন্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এই বছর বাজেটের মূল ব্যয়ের প্রধান খাত উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৪ টি। এ সিটিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে তিন হাজার ৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ডিএনসিসির বাজেট ছিল ২ হাজার ৫৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। নতুন বাজেটে কর হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজার সালামিসহ বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর এই অর্থবছরে উত্তর সিটি কর্মকর্তাদের বেতন, মেরামত রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। আর এসব খরচ বাদ দিয়ে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাজেটে সরকারি অনুদান ও বিশেষ অনুদান থেকে ১৫০ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে। বৈদেশিক সাহায্য থেকে আয় ধরা হয়েছে ১৫৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

দুই সিটির বাজেটের এই চিত্র হলেও প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে উচ্চাভিলাষী সব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে ‘ত্রিমুখী’ ইশতেহারে ৩৮ টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একই দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নুর তাপসও ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার জন্য তার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হবে সিটি করপোরেশনকে। নাগরিক সেবায় ২৪ ঘণ্টাই সক্রিয় থাকবে সেটি। গৃহকর বৃদ্ধি না করা, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু এবং ৯০ দিনের মধ্যে মৌলিক সুবিধা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

এদিকে উত্তর সিটির বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তিনি যানজট ব্যবস্থাপনা, গণপরিবহন বৃদ্ধি, সড়ক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর মাধ্যমে দূষণ ও মশকমুক্ত এবং নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব রাজধানী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ১৩ দফা ইশতেহারে ১৪৪ টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার প্রতিশ্রুতিতেও ঢাকাকে মাদক, যানজট ও দূষণমুক্ত করা, মশা ও জলাবদ্ধতামুক্ত করা, বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নদীভিত্তিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি উঠে এসেছে।

দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট অনুযায়ী যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা তা সব পূরণ করা সম্ভব কী না- এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ ইত্তেফাককে বলেন, প্রার্থীরা নির্বাচনে যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা বেশিরভাগই বাস্তবসম্মত নয়। সিটি করপোরেশনের যে বাজেট রয়েছে তা ঢাকার জনসংখ্যা অনুযায়ী অপর্যাপ্ত। এই সীমিত টাকা দিয়ে তাদের সব সেবা নিশ্চিত করাও সম্ভব না। তবে তারা এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা করে সীমিত বাজেটেই চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তবে তাদেরকে ওয়ার্ডগুলো শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া সেবা সংস্থাগুলোও তাদের সহযোগিতা করলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেবা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা পায় না সিটি করপোরেশন।

আরেক নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন জানান, মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ের জন্য ভোটারদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু তারা এর খুব কমই তাদের ক্ষমতাবলে পূরণ করতে পারবেন। জনগণের প্রয়োজনে কিছু করতে গেলে তাদের সেবা সংস্থাগুলোর শরণাপন্ন হতে হয়। যানজট নিরসনের কথা তারা বলছেন, অথচ পুলিশই তাদের সহযোগিতা করে না।

সিটি করপোরেশনের বাজেট ও মেয়রদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়নসম্ভব কী না, এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, আসলে যানজট নিরসন ও আরো বহু সমস্যা নিরসনে সিটি করেপারেশনের আলাদা কোন বাজেট নেই। আর যানজট নিরসন তো একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে কীভাবে তা নিরসন করা যায় সে বিষয়ে পরিবহণ মালিকদের সঙ্গে বসে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়