সিরাজুল ইসলাম : গরীবের জন্য যার প্রাণ কাঁদে- এমনই একজন নাটোরের বড়াইগ্রামের স্কুল শিক্ষক শেফালী খাতুন। তিনি নিজের টাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনেছেন। বিনা পয়সায় সেবা দিচ্ছেন।
শেফালী খাতুন মেরিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক ও দোগাছী গ্রামের সেনা সদস্য ময়নাল হোসেনের স্ত্রী। প্রতি মাসে চালকের বেতন ও জ্বালানি খরচ বাবদ কমপক্ষে ১৪-১৫ হাজার টাকাও নিজের বেতন থেকেই মিটিয়ে চলেছেন তিনি। শুধু চালকের এক বেলা খাবারের বিনিময়ে এলাকাবাসীকে এ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে আসছেন তিনি।
জানা গেছে, অনেক দিন থেকেই শেফালী খাতুন মানুষের সেবা করার স্বপ্ন দেখেছেন। সে স্বপ্ন পূরণে তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্সের কেনার পরিকল্পনা করেন। তারপর ধীরে ধীরে ৬ বছর যাবত বেতনের কিছু কিছু টাকা সঞ্চয় করেছেন। অবশেষে তার জমানো প্রায় তিন লাখ টাকা ও তার স্বামীর সহযোগিতায় কিনেছেন একটি রিকন্ডিশন অ্যাম্বুলেন্স।
সেই অ্যাম্বুলেন্সে এখন বিনা পয়সায় সেবা পাচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দোগাছী, মশিন্দা, দিঘলকান্দী ,লক্ষীচামারী, মনপিরিত, মেরীগাছা, চুলকাটিয়া ,কুজাইলসহ আশেপাশের ৮-১০টি গ্রামের মানুষেরা। এ পর্যন্ত ফ্রি অ্যাম্বুলেন্সে ৪৮ জন রোগীকে জরুরিভাবে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়াসহ দুইটি লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
চুলকাঠিয়া গ্রামের রাজিয়া বেগম জানান, সেবাটি মূলত এলাকার গরীব অসহায় মানুষদের জন্যে। এটি ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকায় এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হচ্ছে।
মশিন্দা গ্রামের নাসরিন নাহার বলেন, এ সেবা পেয়ে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। সেদিন ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স আমাকে সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ায় প্রাণে বেঁচে গেছি। নাহলে হয়তো মরেও যেতে পারতাম। এ অ্যাম্বুলেন্সে সেবা পেয়ে আমার মতো অনেকের উপকার হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা সদর ও হাসপাতাল থেকে দূরের এলাকা হওয়ায় গরীব মানুষের পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় মেটানোসহ ও অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া মেটানো দু:সাধ্য। এই পরিস্থিতিতে শেফালী ম্যাডামের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ড্রাইভারের এক বেলা খাবারের বিনিময়ে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে যা হতদরিদ্র মানুষের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
এ উদ্যোগ সম্পর্কে স্কুল শিক্ষিকা শেফালী খাতুন বলেন, গ্রামের দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ দেখে তাদের জন্য কিছু একটা করার চিন্তা থেকেই দিনে দিনে জমানো টাকায় এ উদ্যোগ নিয়েছি। তবে একটা অ্যাম্বুলেন্স হওয়ায় অনেক সময় ৮টি গ্রামে সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আরও দু-একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনে এ সেবার পরিধি বাড়াতে চাই। সূত্র: যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :