সালেহ্ বিপ্লব : বরুড়ার কচুর লতির স্বাদ দেশের অন্যান্য এলাকার লতির চেয়ে বেশি। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ডেনর্মাক ও সুইডেনসহ প্রায় ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। লতি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তুলনামূলক কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কুমিল্লার অন্যান্য উপজেলাতেও লতির চাষ বাড়ছে। বাসস
কৃষক মঞ্জু মিয়া জানান, এক বিঘা কচু চাষে খরচ হয় হাজার বিশেক টাকার মতো। শুধু লতি বিক্রি করেই ওঠে আসে সেই খরচ। আর প্রতি বিঘা জমির কচু বিক্রি করা যায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায়, যার পুরোটাই লাভ।
বরুড়ার কাদবা এলাকার কৃষক মিলন মিয়া জানান, তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে এ কচুর আবাদ করছেন। এ ফসল আবাদ করে কখনও লোকসান হয়নি। তার দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও কচুর লতি চাষ করায় পুরো এলাকা এখন কচুর লতির গ্রামে পরিণত হয়েছে।
উপজেলার শরাফতি, মগুজি, কসমি, নিশ্চিন্তপুর, পুরাতন কাদবা, বরাইপুর, যশপুর, পেনুয়া, পাক্কামোড়া, লইপুরা, করিয়াগ্রাম, হুরুয়া, পাঠানপাড়া, লক্ষিপুর, ঝাঁলগাও, নয়নতলা, পোনতলা, বাতাইছড়ি, খোশবাসসহ বিভিন্ন গ্রামে চাষ হচ্ছে কচুর লতি। আর এর শুরু হয়েছিলো যশপুর গ্রাম থেকে। এখন পার্শ্ববর্তী উপজেলা বুড়িচং এর নিমসার, সদর উপজেলার কালিরবাজার, কমলাপুর, মনষাসন, হাতিগাড়া, কৃষ্ণপুর, জাঙ্গালীয়া, সদর দক্ষিণের বাগমারা, ভূশ্চি, লালমাই, চান্দিনার পিহর, মাইজখার, ছায়কোট, রামমোহনসহ বিভিন্ন গ্রাম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে লতি।
বরুড়ার ঝাঁলগাও গ্রামের সফল লতি চাষি আবেদ আলী জানান, এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস এ পুরো মৌসুম হলেও সারা বছর এর ফলন পাওয়া যায়।
লতির পাইকার মুমিন ও রনি বলেন, বরুড়ার বাতাইছড়ি লতির বাজার থেকে সিজন টাইমে প্রতিদিন ৬০-৭০ টন লতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন তারা। বর্তমান কৃষকদের কাছ থেকে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি লতি ২৫-৪০ টাকা দরে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
সবজি ব্যবসায়ী নেয়ামত আলী জানান, তিনি সপ্তাহের দুইদিন এখানকার হাট ও কৃষকদের কাছ থেকে কচুর লতি কিনে নিয়ে যান। পরে সেগুলো চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট থেকে বিভিন্ন দেশে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করেন।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ বছর যাবত এখানকার কচুর লতি কিনে কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রি করছেন। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় সবজিটির প্রচুর চাহিদা থাকায় এ ব্যবসা করে বেশ ভালো আছেন তিনি।
কুমিল্লার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, এখানকার মাটি কচুর লতি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই লতি আবাদ হচ্ছে।