আমাদের সময় : রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় আগামীকাল সোমবার ঘোষণার দিন রেখেছেন আদালত। যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর এ তারিখ ঠিক করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম। আজ থেকে ১৯ বছর আগে ঠিক একই দিনে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল পাঁচজনকে, আহত হয়েছিলেন আরও অনেকেই।

রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা নিয়ে ওই আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই পলাতক ও আটক সব আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’ তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মামলাটিতে প্রথম চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছিল। পরবর্তীতে আবার তদন্তে গিয়ে চার্জশিট হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে একজনের কথিত একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো সাক্ষ্য কিংবা তথ্য-প্রমাণ নেই। তাই শুধু ওই একজনের কথিত স্বীকারোক্তি দিয়ে আসামিদের দণ্ড হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

মামলায় আসামিরা হলেন মুফতি আবদুল হান্নান, মুফতি মাঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম। তবে ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে হত্যাচেষ্টা মামলায় জঙ্গি নেতা আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। আর শওকত ওসমান, সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান সুমন ও মাঈন উদ্দিন কারাগারে আছেন। তারা সবাই আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি এবং যাবজ্জীবন কারাদÐে দÐিত।

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টনে সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলায় নিহত হন পাঁচজন, আহত হয়েছিলেন অন্তত ২০ জন। ওই হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিলেন সিপিবি নেতা হিমাংশু মÐল, আবদুল মজিদ, আবুল হাশেম ও মুক্তার হোসেন। আহত হওয়ার ১৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস। পরে ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। তবে ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে আদালতে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ, যা আদালত গ্রহণ করলে বিচার থেমে যায়।

এর পর ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। পরবর্তীতে ওইসব ঘটনায় দায়ের মামলায় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে সিপিবির সমাবেশে হামলায় জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ আসে। এর পরই ২০০৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর পুলিশ মামলটি পুনঃতদন্তের আবেদন করে। দুদিন পর সেই আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

পুনঃতদন্তে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর ১৩ আসামির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃণাল কান্তি সাহা। একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩০ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরের বছর ২১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। বিভিন্ন সময় আদালত মামলার ১০৭ সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। তবে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি একই আদালতে বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।