মুসবা তিন্নি : পদ্মার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সবুজে ঘেরা পরিচ্ছন্ন নগরী রাজশাহী। এই নগরী মূলত শান্তির নগরী, শিক্ষা নগরী, রেশম নগরী, সবুজ নগরী এবং আমের নগরী হিসেবে পরিচিত। তবে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাজশাহীর অবস্থা ছিলো করুন, বর্তমানের সবুজে সমৃদ্ধ নগরী তখন অনেকটাই ছিলো মরুভূমির মতো।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো রাজশাহী সিটি মেয়র হিসেবে জনাব এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন নির্বাচিত হোন। তখন থেকেই তিনি সপ্ন দেখেন রাজশাহীকে একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজে ঘেরা নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন।
এই প্রসঙ্গে মেয়রের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুদ্ধের পর ৮০ ও ৯০ এর দশকে রাজশাহী ছিলো অনেকটাই মরুভূমির মতো সামান্য ঝড় কিংবা জোরে বাতাস হলেই পদ্মার চরের বালিতে পুরো শহরে আস্তর পরে যেতো। আর এগুলো ছিলো নিত্যদিনের সঙ্গী, এমনকি মানুষের ঘরবাড়িতেও এই বালি প্রবেশ করতো ফলে অধিকাংশ সময় সবাই নিজদের বাড়ির দরজা, জানালা বন্ধ করে রাখতো। জনমানুষের এই দূর্ভোগের কথা চিন্তা করেই তিনি মেয়র হওয়ার পর চর এলাকা সহ প্রতিটি পাড়া, মহল্লা এবং স্কুল কলেজে প্রচুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেন। জানা যায়, সম্প্রতি বায়ু দূষণ রোধে নগরীর ৭ থেকে ৮ টি পয়েন্টে বায়ু বিশুদ্ধিকরণ যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে যেটি ট্রেস করবে কোন অঞ্চলের বায়ু কেমন এবং দূষণের মাত্রা নির্ণয় করে তাৎক্ষণিকভাবে তা বিশুদ্ধ করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজশাহীতেই সর্বপ্রথম এই বায়ু বিশুদ্ধিকরণ যন্ত্রটি বসানো হবে।
বর্তমানে রাজশাহীতে অবকাঠামো নির্মাণ এবং উন্নয়নের জন্য ২ হাজার ৯৩১ কোটি টাকার একটি বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নত রাস্তা, উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম, ছয়টি মিনি ফ্লাইওভার নির্মাণ, নাগরিক বিনোদন কেন্দ্র এবং উন্নত রেলযোগাযোগ ও বানিজ্যিক খাতে ব্যয় করা হবে এই অর্থ।
রাজশাহী প্রাচীন জনপদ হিসেবে পর্যটকের আগ্রহ কম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাচীন সম্পদগুলো সংরক্ষণের অভাবেই এখনো রাজশাহী পর্যটক নগরী হয়ে উঠতে পারেনি। তবে তিনি বলেন, আমের নগরী হিসেবে পরিচিত এই শহরে আমকে কেন্দ্র করেই একটি টুরিজম প্ল্যান রয়েছে যেখানে বাংলাদেশীরা তাদের বিদেশি বন্ধুদের নিয়ে আসতে পারে অথবা দেশের যেকোনো অঞ্চলের মানুষই আমের বাগানে এসে নিজের পচ্ছন্দের আম টাটকা ও ফরমালিন মুক্তভাবে সরাসরি গাছ থেকে দেখেই কিনে নিতে পারবেন। পাশাপাশি রাজশাহীতে যে তিনটি প্রাচীন হিন্দু স্থাপনা রয়েছে সেগুলো তিনি পুনরায় পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছেন।
এছাড়া পদ্মাপাড়ের যে নৈসর্গিক সৌন্দর্য রয়েছে সেটিও আরো আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তুলতে চান।
তবে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বেকারত্ব। শিক্ষা নগরী হিসেবে খ্যাত এই নগরীতে শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মসংস্থানের অভাবে লাখ লাখ তরুণ তরুণী বেকার থাকে তাই তারা কর্মের সন্ধানে চলে যায় রাজধানী ঢাকায় কেউবা পাড়ি জমায় দেশের বাইরে।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ইতিমধ্যে তিনি রাজশাহীতে বেকার সমস্যা দূরীকরণে দুটি শিল্প এলাকার অনুমোদন দিয়েছেন। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিসিকশিল্প পুরোপুরি ব্যর্থ হয় এবং যে কারণে রাজশাহী শিল্পের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে তবে বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুনরায় দ্বিতীয় বিসিক এলাকার জন্য ৫০ একর জায়গা নির্ধারণ করেছেন।
তিনি বলেন, বিগত সরকার আমলে রাজশাহীর রেশমশিল্প ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হয় যে কারণে রেশম চাষে রাজশাহী পিছিয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে সকল সমস্যা কাটিয়ে সেটি পুনরুদ্ধারের কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
রেশম ছাড়াও রাজশাহীর উন্নয়নে চামড়া শিল্পের প্রতিও এবার জোর দেয়া হবে যাতে করে রাজশাহী শহর বেকার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে।
মেয়র জানান, রাজশাহী শহরের উন্নয়নে তিনি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। উন্নত একটি মডেল শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি নগরীর সোনাদীঘির মোড় সহ বেশকটি জায়গায় উন্নত ভবন, শপিংমল নির্মাণ সহ বেশকিছু উন্নত পরিকল্পনার ওপর কাজ করছেন। সোনার বাংলায় সোনার শহর হবে রাজশাহী এটিই তার লক্ষ্যে।
আপনার মতামত লিখুন :