রাশিদ রিয়াজ : একদা ফুটবল পায়ে বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন৷ একাই তিনি তুরস্ককে নিয়ে গিয়েছিলেন ফিফা বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থানে৷ দু’দশকও অতিক্রম হয়নি৷ ফুটবলপ্রেমীদের মনে সেই স্মৃতি এখনও টাটকা৷ তবে নিজের দেশেই তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে আস্তাকুঁড়ে৷ জাতীয় নায়ক হিসেবে একদা জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপ থেকে যিনি দেশে ফিরেছিলেন, সেই হাসান সুকুরকে দেশছাড়া করেছে এরদোগান সরকার৷
২০০২ সালে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়য় যুগ্মভাবে আয়োজিত ফিফা বিশ্বকাপের নায়ক ছিলেন হাকান সুকুর৷ ম্যাচ শুরুর মাত্র ১০ সেকেন্ডে গোল করে ফুটবলবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সেবার৷ তুরস্ককে শুধু সেমিফাইনালেই তোলেননি, বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান এনে দিয়েছিলেন তিনি৷ ফুটবল ছাড়ার পর যোগ দেন রাজনীতিতে৷ ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের একেপি (জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট) পার্টি যোগ দিয়েছিলেন সুুকুর৷ তবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তাঁর৷ বছর দু’য়েক পরেই এরদোগানের সঙ্গে মতবিরোধে পার্টি ত্যাগ করেন৷
রাজনীতি ছাড়ার পরেই সুকুরের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা৷ তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়৷ পরিবারকে হেনস্থা শুরু হয়৷ ২০১৬ সালে সুকুরের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা৷ গ্রেফতার করা হয় তাঁর পিতাকে৷ সুকুরের যাবতীয় সম্পতি বাজেযাপ্ত করা হয়৷ ২০১৫ সালে তুরস্ক ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন সুকুর৷ তাঁর পিতাকে মুক্তি দেওয়া হয় তিনি মারণ রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে৷
এক জার্মান সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুকুর জানান, শুরুতে রুজির টানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্যাফে চালাতেন৷ তবে সেটি পরে বন্ধ করে দিতে হয়৷ এখন তিনি অন্ন সংস্থানের জন্য উবর চালান ওয়াশিংটনে৷ সঙ্গে বিক্রি করেন বই৷ তিনি এও জানিয়েছেন যে, এরদোগানের চরম বিরোধী হলেও তিনি দেশকে এখনও ততটাই ভালোবাসেন, ঠিক যতটা দেশের হয়ে মাঠে নামার সময় বাসতেন৷ জাতীয় পতাকার প্রতি তাঁর আবেগ চিরকাল অটুট থাকবে৷’
একদা গালাতসারে, তোরিনো, ইন্টার মিলান, পারমা, ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন সুকুর৷ ক্লাব ফুটবলে আড়াইশোর বেশি গোল রয়েছে তাঁর৷ জাতীয় দলের হয়ে ১১২ ম্যাচে ৫১টি গোল করেছেন৷ ফুটবলের যাবতীয় স্মৃতি এখন ফিকে সুকুরের কাছে৷ আপাতত উবর চালক হিসেবে তাঁর পায়ে এখন ট্যাক্সির অ্যাকসেলেটর৷ কোলকাতা ২৪
আপনার মতামত লিখুন :