শিরোনাম
◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারী, ২০২০, ০৭:৪৯ সকাল
আপডেট : ১৫ জানুয়ারী, ২০২০, ০৭:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধর্ম আর সংস্কৃতি যেন পরস্পরের পরিপূরক হয় গ্রামবাংলায় হেঁটে বেড়ালে যেন ভেসে আসে বাউল জারি, সারি, ভাটিয়ালি বা ভাওয়াইয়ার সুর

প্রভাষ আমিন : শরিয়ত বয়াতীর বক্তব্য আমি শুনেছি। তার বক্তব্য আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়নি। শুধু আমি নই, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মতো কিছুই বলেননি তিনি। শুধু বলেছেন, ইসলামের কোথাও গান-বাজনা হারাম, এটা লেখা নেই। কেউ প্রমাণ করতে পারলে ৫০ লাখ টাকা দেবেন। চাইলে কেউ চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করে তাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারতেন। সেটা হতো একজন প্রকৃত মুসলমানের কাজ। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম, যুক্তির ধর্ম, পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম। আর সত্যি কথা হলো, ছেলেবেলো থেকেই শুনে আসছি, কোন কিতাবে লেখা আছে গো হারাম বাজনা-গান। গান-বাজনা হারাম, আমি অন্তত এমন কোনো সুনির্দিষ্ট উল্লেখ পাইনি। রমজানের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে রেডিও-টিভিতে বেজে ওঠে, ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। এমন অনেক গজল আছে যা ইসলাম সম্পর্কে, আল্লাহ সম্পর্কে, মহানবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) প্রতি মানুষের হৃদয়ে গভীর আবেগ ও ভালোবাসার সৃষ্টি করে। তারচেয়ে বড় কথা হলো বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এই দেশের একটি জাতীয় সংগীত আছে। বাংলাদেশের লাখো মানুষ গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অল্প কিছু সাম্প্রদায়িক এবং অতি দুর্বল অনুভূতিসম্পন্ন কিছু মানুষ ছাড়া গান ভালোবাসেন না, এমন মানুষ আমি দেখিনি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও দেখেছি জাতীয় সংগীত বা দেশাত্মবোধক গানে গলা মেলান।

এমন একটি দেশে গানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার অপরাধে বয়াতীকে রিমান্ডে নেয়া হবে, এটা অবিশ্বাস্য। সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে পুলিশের অতি উৎসাহের কোনো মিল নেই। আমি অবিলম্বে শরিয়ত বয়াতির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি এবং মিথ্যা মামলা করার দায়ে মাওলানা ফরিদুল ইসলামকে সতর্ক করে দেয়ার অনুরোধ করছি। আগেই বলেছি শরিয়ত বয়াতির বক্তব্যে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো কিছু নেই। আসলে আমাদের যাদের ঈমান দুর্বল, কথায় কথায় তাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে। কেউ প্রশ্ন করলেই অনুভূতিতে আঘাত লেগে গেলে আপনাদের উচিত ধর্ম সম্পর্কে আরও পড়াশোনা করা। ইসলাম এতো ঠুনকো বিশ্বাসের ধর্ম নয়। হলে ১৪০০ বছর ধরে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস হয়ে টিকে থাকতে পারতো না। কথায় কথায় ধর্মকে টেনে এনে আপনারাই বরং ইসলামকে দুর্বল করছেন। ইসলাম মানুষের মন জয় করেছে শান্তির বাণী দিয়ে। বিশেষ করে এই উপমহাদেশে সুফি ভাবধারার ইসলাম এক প্রশান্তির বারতা ছড়ায়। সেখানে ধর্মের নামে এই উগ্রতা, এই হিংস্রতা ইসলামকেই বরং হেয় করে। ইসলামের পক্ষে লড়াই করার হাজারটা যুক্তি আছে। পারলে সেগুলো জেনে লড়াই করেন, নইলে চুপ থাকেন। আপনারা কথায় কথায় মামলা করে ইসলামকে অপমান করছেন, যেটা আমাদের মতো আরও অনেকের অনুভূতিতে আঘাত করছে। শরিয়ত বয়াতি ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। বলেছেন, ধর্মের নামে যারা ব্যবসা করেন, সেই ভ- কাঠমোল্লাদের বিরুদ্ধে। রাগের মাথায় একবার তিনি তাদের ‘শালা’ বলে গালিও দিয়েছেন, তাও সেটা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে নয়। বাংলাদেশে ‘শালা’ একটি সাধারণ গালি, রিমান্ডে নেয়ার মতো অপরাধ নয়। বরং ইউটিউব খুজলে আপনারা এর চেয়ে অনেক বেশি অশ্লীল অনেক ওয়াজ শুনতে পাবেন।

সাম্প্রদায়িক শক্তির চাপে, জঙ্গিবাদের ভয়ে বাঙালি সংস্কৃতি এখন অনেকটাই কোণঠাসা। এই অপশক্তি পহেলা বৈশাখের উৎসব নিয়ে প্রশ্ন তোলে, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হওয়া বর্ষবরণের শোভাযাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আগে শীত এলে গ্রামে গ্রামে ওয়াজ মাহফিল যেমন হতো, পাশাপাশি যাত্রাও হতো। এখন যাত্রা হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। বাউল, বয়াতিরা আগে থেকেই ভয়ে কোণঠাসা। তাদের কণ্ঠে এখন আর উদার গান খুব একটা শোনা যায় না। চেষ্টা হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির, মতপ্রকাশের কণ্ঠ চেপে ধরার। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে অনুরোধ, তারা যেন কঠোরভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার উদ্যোগে নেন। সবাই যাতে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে, নিজ নিজ সংস্কৃতি লালন করতে পারে, নিজের মতপ্রকাশ করতে পারে। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। আপনার বিশ্বাস করার অধিকার যেমন আছে, আরেকজনের অবিশ্বাস করারও অধিকার আছে। এই বাংলার মানুষ আবহমান কাল ধরে ধর্ম যেমন পালন করছে, উৎসবও পালন করছে। আমরা সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ফিরে পেতে চাই। ধর্ম আর সংস্কৃতি যেন পরস্পরের পরিপূরক হয়। গ্রামবাংলায় হেঁটে বেড়ালে যেন ভেসে আসে বাউল, জারি, সারি, ভাটিয়ালি বা ভাওয়াইয়ার সুর। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়