গাজী নাসিরুদ্দিন আহমেদ : পাবলিক পারসেপশনের গল্প বলি। ইরাকে রোজ হামলা হচ্ছে। সাদ্দাম হোসেনের যেকোনো সময় পতন ঘটবে। বাজারে যুগান্তর পত্রিকা রমরমা। প্রয়াত সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার সেই পত্রিকার সম্পাদক। সার্কুলেশনে এক নম্বর প্রথম আলোকে টপকে গেছে যুগান্তর। বাংলা পত্র-পত্রিকায় সাদ্দামের জয়জয়কার। সারাদেশে পত্রিকা বিক্রিও বেড়ে গেছে। আমাদের ভোরের কাগজের পড়তিকাল। এতো বড় যুদ্ধ আমি একা সামলাই। বেতন অনিয়মিত। গল্প লেখার তাড়াও নেই আমাদের। আমাদের ডেস্কের ড. হুমায়ুন হাশিম প্রবল সাদ্দামবিরোধী। তার আমেরিকাপ্রেম সাংবাদিক মহলে সুবিদিত। যুগ্ম বার্তা সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলকের নেতৃত্বে মার্কিনবিরোধিতাও প্রবল। যা বলছিলাম। ইরাকি তথ্যমন্ত্রী সাইফ আল সাহাব সম্ভবত তার নাম, এই লোকের চাপাবাজিতে গোয়েবলস সাহেবও লজ্জা পেতেন হয়তো। লোকটা অকারণ উদাহরণ হয়ে আছেন। যদিও গোয়েবলস সাহেবের বাবা-দাদারা একালে সর্বত্র বিরাজমান। ভোরের কাগজের একজন লেখক ছিলেন।
তিনি সম্পাদকীয়, ফিচার ইত্যাদি বিভাগে যেতেন। একদিন বার্তাকক্ষে এসে আমাকে বললেন, আসল খবর কি? কারণ সেদিন যুগান্তরে বড় করে গ্রাফিক্স দিয়ে সাদ্দামের চার স্তরের দুর্গ সুরক্ষার খবর দেয়া হয়েছে। এখনকার মতো বিদেশের খবরের হাজার-লাখো সোর্স তখন ছিলো না। ফেসবুক বিশ্লেষকরাও ছিলো না। এমন একটা সময় ভাবতে পারেন। ফেসবুক প-িতবিহীন সমাজ। ভদ্রলোককে বললাম, মনে হয় বড়জোর এক-দুইদিন সাদ্দাম টিকবে।
সেইদিন সন্ধ্যায় টেলিভিশনে সাদ্দামের মূর্তি টেনে নামানোর দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। হুমায়ুন ভাইয়ের চোখ চক চক করছে। মনে হচ্ছে তিনি পুত্র সন্তানের পিতা হয়েছেন। অলকদা আমাকে বলছেন, ভালো করে বোঝো। দেখো হলিউডে শুট করে বানানো কিনা। তো হেডলাইন কি হবে? হুমায়ুন ভাই অতি উত্তেজিত। বাগদাদের পতন না সাদ্দামের পতন। কোনটা লেখা হবে। উত্তেজিত মুসলমান ভাইয়েরা আমাদের হেডলাইন বিশ্বাস করবে কিনা এটাই টেনশন। ঘটনা তো বুঝে ফেলেছি। সারওয়ার ভাইয়ের পরের দিনের হেডলাইনটা এখন আর মনে করতে পারি না। যুদ্ধ শেষ। যুগান্তরের সার্কুলেশনও কমে গেলো। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :