শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১৫ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস

প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারী, ২০২০, ০৬:৩৫ সকাল
আপডেট : ১২ জানুয়ারী, ২০২০, ০৬:৩৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকার নির্বাচনে ‘সমন্বয়ক’ বিতর্ক

আমাদের সময় : স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা তাদের দলের প্রার্থীদের হয়ে ভোটের প্রচারে নামতে পারবেন কি না- এ নিয়ে গতকাল সিইসি, ক্ষমতাসীন দলের দুই সাংসদের বক্তব্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ ঢাকা সিটি নির্বাচনে দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। দুজনই জাতীয় সংসদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এ বিষয়ে গতকাল বলেন, সিটি নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে পারবেন না কোনো সংসদ সদস্য। এক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ততা থাকা যাবে না। সিইসির এ বক্তব্যে দ্বিমত রয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি সমন্বয়ক দুই নেতার। তোফায়েল বলছেন, ভোট চাওয়া ছাড়া সংসদ সদস্যরা আর সবই করতে পারবেন। আর আমু এ সংক্রান্ত বিধি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। সিটি নির্বাচনের প্রচারে এমপিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে ইসির নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত বিধান বাতিলের দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও। এই যখন অবস্থা, তখন এ ইস্যুতে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলছেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই সমন্বয়কের বিষয়ে ইসি যা বলছে, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি আচরণ বিধিমালাতেই তা নেই।

গতকাল শনিবার ১৪ দলের যৌথসভা শেষে সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যরা সিটি নির্বাচনে প্রচার চালাতে পারবেন না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন কাউন্সিলর প্রার্থী, যিনি সংসদ নির্বাচনের সময় এমপির পক্ষে কাজ করেছেন, সেই এমপি এখন কাউন্সিলরকে এর রিটার্ন দিতে পারবেন না; এটা হয় না। এ বিধান নাগরিক অধিকার খর্ব করতে করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাবেক এমপিরা যদি প্রচার চালাতে পারলেও বর্তমান এমপিরা পারবেন না, এটা কোনো কথা হলো না।

এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলো কীভাবে? এ আইন বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ইসির।

অন্যদিকে গতকাল শনিবার সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আচরণ বিধিমালায় যে অসঙ্গতি রয়েছে, আমরা তা তুলে ধরেছি ইসির কাছে। মাহবুব তালুকদার ছাড়া অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। এর পর সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো ক্যাম্পেইনে যেতে পারব না, সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। আমরা যারা এমপি, তারা পথসভায় যাব না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যাম্পেইন করব না। কিন্তু দলের পক্ষে আমাদের সমন্বয়ক হিসেবে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই দায়িত্ব হিসেবে আমরা ঘরোয়াভাবে মিটিং করতে পারব।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বেঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে পুরোপুরি ভিন্নমত প্রকাশ করেন সিইসি। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সংসদ সদস্যরা ভোট চাইতে পারবেন না। তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে এমপিদের কোনও সম্পৃক্ততা থাকতে পারবে না। এছাড়া সবই করতে পারবেন তারা। নির্বাচনের বাইরে তাদের নিষ্ক্রিয় করার সুযোগ নেই ইসির। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন-সংক্রান্ত যে কোনো কার্যক্রম, তা ঘরে বা বাইরে যেখানেই হোক, এমপিরা সেটা করতে পারবেন না। বিধিতে সেভাবেই বলা আছে। আমরা তাদের তা বুঝিয়ে বলেছি।

তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগের নির্বাচনি সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকতে পারবেন কিনা- এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আমার মনে হয় তারা থাকতে পারেন না। তবে সমন্বয়কের কমিটিতে কে আছেন অফিশিয়ালি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমরা পাইনি। পেলে তাদের নিষেধ করব সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালনে। সেক্ষেত্রে তারা ঘরে বসে কি করবেন? এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, সেটা আমি কেমন করে বলব?

প্রার্থীর সঙ্গে এমপিরা থাকতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রার্থীর সঙ্গে এমপিরা থাকার ব্যাপারে আইনে তো তেমন কোনও বাধা-নিষেধ নেই। যদি নির্বাচনি এলাকায় কোনও রাজনৈতিক কর্মকা- থাকে, সেখানে যেতে পারবেন না, আমি তা বলতে পারি না। এমপিরা যেতে পারবেন। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না। তিনি যোগ করেন, রাজনৈতিক কর্মকা- যেমন মুজিববর্ষ পালন হচ্ছে, সেখানে সভা সমাবেশের আয়োজন হলে সবাই যেতে পারবেন। শুধু প্রার্থীর হয়ে প্রচার আর ভোট চাওয়া যাবে না।

প্রসঙ্গত, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ ২০১৬ বিধিমালার ২২-এর ১ ধারায় উল্লেখ আছে- ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, উপরোক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হইলে তিনি কেবল তাহার ভোট প্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাইতে পারিবেন।’

সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে ওই বিধিমালার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সম পদমর্যাদার কোনও ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রদের বোঝানো হয়েছে।

ঢাকা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই সমন্বয়কের বিষয়ে সিইসির বক্তব্য প্রসঙ্গিত ইস্যুতে গতকাল সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন  বলেন, সিইসি যা বলেছেন তা বিধিতে নেই। তিনি পরিপত্র জারি করতে পারেন। সমন্বয়কারীকে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বাদ দিতে হলে একটা পরিপত্র জারি করতে হবে। তিনি বলেন, এখন যে বিধি রয়েছে তার কোথাও সমন্বয়কারী নেই। ঘরে বসে কেউ যদি কিছু করে তবে সেখানে কিছু করার নেই।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আচরণ বিধি সংশোধনের আবেদন করা হয়। সে অনুযায়ী ইসি প্রাথমিক উদ্যোগ নিলেও আচরণ বিধি সংশোধনের বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়